Thank you for trying Sticky AMP!!

কওমি শিক্ষার স্বীকৃতির উদ্যোগ, কমিটি গঠন

সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা দেশের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের আলোকে মতামত দিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রায় চার বছর আগে একবার এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও একটি পক্ষের বিরোধিতায় সেটি স্থগিত হয়ে গিয়েছিল।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের আলোকেই স্বীকৃতির জন্য আইনের খসড়া করা হয়েছিল, কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক কার্যকর করা যায়নি। এখন সেই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তাই আইনটি আরও কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না, সেটা দেখার জন্য এই কমিটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। কওমি মাদ্রাসাগুলো পরিচালিত হচ্ছে পৃথক বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি বোর্ডের অধীনে।

২০১২ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এই শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তখন কওমি মাদ্রাসাশিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে সুপারিশ দিতে ২০১২ সালে ১৭ সদস্যবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা হয়। শুরুতে এই কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মাওলানা আহমদ শফী। কিন্তু আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি শুরু হলে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে তিনি এই কমিশন থেকে সরে যান। পরে কো-চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদের নেতৃত্বে কমিশন প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে কওমি মাদ্রাসাশিক্ষাকে ছয় স্তরে বিন্যস্ত করে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর মারহালাতুত তাকমিল বা দাওরায়ে ই-হাদিস স্তরকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দিতে বলা হয়। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত না হওয়া, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় হস্তক্ষেপ না করাসহ ছয়টি শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।

পরে এই কমিশনের সুপারিশের আলোকে ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইনের খসড়া ২০১৩ সালের অক্টোবরে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হলেও বৈঠকে বিবেচিত বিষয়ের (এজেন্ডা) তালিকা থেকে তা প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তখন থেকেই সেটি স্থগিত হয়ে যায়। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে এখন এই খসড়া অধিকতর যুগোপযোগী করে সুপারিশ দিতে গত মঙ্গলবার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

ইকরা বাংলাদেশের পরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ এই কমিটির আহ্বায়ক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা অণুবিভাগ এ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’-এর খসড়া পর্যালোচনা করে কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষাসচিবের কাছে মতামত বা সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই স্বীকৃতি চাই। কমিটির সবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে আমরা বসতে পারব। আমরা প্রথমে আইনের খসড়াটি মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে দেব। এরপর আমাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করব।’