ত্রাণমন্ত্রী ২০০ পরিবারকে ত্রাণ দিলেন

কাদা-পানি ভাইঙ্গা আইলাম, কিছুই পাইলাম না

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দব ইউনিয়নের বলদমারী গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শামিয়ানা টাঙিয়ে আজ বুধবার ২০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের আগে বক্তব্য দিচ্ছেন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ছবি: মঈনুল ইসলাম
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দব ইউনিয়নের বলদমারী গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শামিয়ানা টাঙিয়ে আজ বুধবার ২০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের আগে বক্তব্য দিচ্ছেন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ছবি: মঈনুল ইসলাম

‘এত কষ্ট কইরা কাদা-পানি ভাইঙ্গা আইলাম, কিছুই পাইলাম না।’ ত্রাণ না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় ক্ষোভে-দুঃখে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দব ইউনিয়নের বলদমারী গ্রামের ৭২ বছর বয়সী নুর বানু বেওয়া।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দব ইউনিয়নের বলদমারী গ্রামের বন্যাকবলিত ও নদীভাঙনের শিকার ২০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বলদমারী গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পারে শামিয়ানা টাঙিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৩ হাজারের মধ্যে ২০০ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়। কাঁদা-পানি ভেঙে এসেও অনেকে ত্রাণ না পেয়ে মঞ্চের সামনের সড়কে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এঁদের একজন বলদমারী গ্রামের আছমা বেগম (৩৭) বলেন, ‘আমার কিছুই নাই। স্বামী বেলাল অচল। ভিক্ষা করে। বন্যার সময় বাড়ি ভেঙে যায়। আমারে কার্ড দিল না। ছাওয়াল-পাওয়াল নিয়া খুব দুর্ভোগে আছি গো বাবা।’

দুর্গত মানুষ হাজারের বেশি। ত্রাণ দেওয়া হবে ২০০ জনকে। তাঁদের আলাদা বসিয়ে রাখা হয়েছে। ছবিটি আজ বুধবার কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বলদমারী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম

৬৫ বছরের বৃদ্ধ বানিতন বেওয়া বলেন, ‘স্বামী বয়াতি মইরা গ্যাছে মেলা আগে। পোলাপানগো লইয়া কষ্টে আছি। আমারে ছিলিপ দিল না। হ্যারা কারে দিল।’ অসুস্থ তাহেরের স্ত্রী আমিনা বলেন, ‘বানে বাড়ি ভেঙেছে। পরের জায়গায় পোলাপান নিয়ে থাকি। আমাগরে কি ত্রাণ পাওনের কথা আছিল না? তবে ক্যান পাইলাম না?’ এ সময় অসংখ্য মানুষ ত্রাণ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে।

শুধু খাদ্য সাহায্য নিয়ে ক্ষোভ নয়, মঞ্চের সামনে সড়কে এলাকাবাসীর পক্ষে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে ছিল অসংখ্য মানুষ। তাদের দাবি, অবিলম্বে রৌমারীকে বন্যাদুর্গত এলাকা ঘোষণা করা, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ ও নদীভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এদের পক্ষে মহির উদ্দিন জানান, ব্রহ্মপুত্রের নদের ভাঙনে হুমকির মুখে রৌমারী উপজেলা। ত্রাণমন্ত্রী যে ইউনিয়নে ত্রাণ দিয়েছেন, বর্তমান সেখান তীব্র ভাঙন চলছে। বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার অসহায় মানুষদের পর্যাপ্ত খাদ্যসহায়তা দেওয়া হোক। তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে ২০০ পরিবারকে।

নুর বানু বেওয়ার স্বামী নেই। পানি পেরিয়ে লাঠি হাতে কষ্ট করে এসেছেন ত্রাণের জন্য। ত্রাণের স্লিপ তাঁকে কেউ দেয়নি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে আহাজারি করে বিলাপ করছেন। ছবিটি আজ বুধবার কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বলদমারী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম

রৌমারী ঘাট থেকে নৌকায় বলদমারী আসার পথে দেখা যায় পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দব ইউনিয়নের নদের তীরবর্তী গ্রামগুলোর গাছপালা, বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে। লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে সময় পাচ্ছেন না। অনেক স্থানে কেউ কেউ গাছপালা কেটে নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও ভিটেমাটির অর্ধেক পড়ে আছে। ত্রাণের জন্য অনেক নারী-পুরুষ নদের পাড় দিয়ে দৌড়ে আসছেন। এঁদের একজন মেহের আলী বলেন, ‘বাড়ি-ভিটার ওপর দিয়া পানি ঢল গেছে। গাছপালা ভাঙা। ঘর পইড়া গেছে। আমার নাম তো নিল না। শুধু বলদমারী নয়, ফুরুয়ার চর, কুটিচর ও খেড়য়ার চর থেকে লোকজন ত্রাণের জন্য এসে ঘুরে গেছে।

২০০ পরিবারকে দেওয়ার জন্য রাখা ত্রাণসামগ্রী পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। ছবি আজ বুধবার কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বলদমারী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম

মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ত্রাণের জন্য লোকজন হইহুল্লোড় শুরু করেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন তালুকদার ও উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। আরও ১০০ মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য তালিকা করার নির্দেশ দেন।

উপজেলা ত্রাণ কার্যালয়ের হিসাবমতে, বন্দব ইউনিয়নে লোকসংখ্যা ৩৪ হাজার ৫০০ জন। এঁদের মধ্যে নদীভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ৪০০ জন। আজ ২০০ পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়।

উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেনের কাছে জানতে চাই, ক্ষতিগ্রস্ত ১৩ হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র ২০০ জনকে ত্রাণ দিলেন, মানুষ তো ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, পানি আসার পর প্রথম দিকে ২০০ জনকে দেওয়া হয়েছে।