আবাসিক পাখি

কালো-খোঁপা বুলবুলি

কালো-খোঁপা বুলবুলির ছবিটি লেখক সম্প্রতি কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বড়ছড়া থেকে তুলেছেন
কালো-খোঁপা বুলবুলির ছবিটি লেখক সম্প্রতি কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বড়ছড়া থেকে তুলেছেন

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বড়ছড়ার সর্পিল ঝিরি ধরে হাঁটছি। অনেকটা পথ হাঁটা হয়ে গেল, কিন্তু কোনো পাখির তো দেখা পেলাম না। প্রচণ্ড গরমে পাখিরা বোধ হয় গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে, তাই চোখে পড়ছে না। কী আর করা, অনেকটা বাধ্য হয়েই বুনো ফুল-ফলের ছবি তুলতে লাগলাম। এমন সময় হঠাৎই পানিতে সোনারঙা কালো ঝুঁটিওয়ালা এক জোড়া পাখিকে উল্লাসে গোসল করতে দেখলাম। গরমের এই গোসলে ওরা নিশ্চয়ই বেশ আরাম পাচ্ছে। গোসলের দৃশ্যের দিকে অপলক তাকিয়ে আছি। ছবি তোলার কথা মনেও আসেনি। পাশে থাকা ছাত্র ইয়াছিনের ফিসফিসানিতে সংবিৎ ফিরে পেলাম, ‘স্যার, আপনার ডান পাশের গাছের ডালে দেখুন। কালো-খোঁপাওয়ালা একটা পাখি বসে আছে, জলদি ক্লিক করুন।’ সঙ্গে সঙ্গেই ক্লিক করলাম। অপূর্ব! যদিও কাপ্তাইয়ে এই পাখিদের আমি সব সময়ই দেখি। দেখি লাউয়াছড়া-সাতছড়ি-আদমপুর ও রেমা-কালেঙ্গায়। কিন্তু নতুন পাখি-প্রজাপতির সন্ধানে ব্যস্ত থাকায় এদের প্রতি তেমন একটা নজর দেওয়া হয় না। তাই ভালো ছবিও তোলা হয় না। তবে পাখিগুলো কিন্তু বেশ সুন্দর!

এই আবাসিক পাখির নাম কালো-খোঁপা বুলবুলি। কালো-ঝুঁটি বুলবুলি বা কালো-খোঁপা হলদে বুলবুলি নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Black-crested Bulbul বা Black-headed Yellow Bulbul। Pycnonotidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম pycnonotus flaviventris

কালো-খোঁপা বুলবুলির দেহের দৈর্ঘ্য ১৮-১৯ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৩০-৩৪ গ্রাম। এদের কালো মাথায় চমৎকার চকচকে কালো খাড়া ঝুঁটি। ঘাড়-গলাও চকচকে কালো। ডানাসহ দেহের ওপরটা জলপাই-সবুজ ও নিচটা সোনালি-হলুদ। লেজ জলপাই-বাদামি। চোখ সাদাটে। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে-বাদামি ও ঝুঁটি অপেক্ষাকৃত ছোট। দেহের পালকের রং অনুজ্জ্বল ও তাতে ধূসরের প্রাধান্য।

কালো-খোঁপা বুলবুলি সচরাচর দৃশ্যমান পাখি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সব বনে দেখা যায়। একাকী, জোড়ায় ও ছোট দলে বিচরণ করে। গাছপালা, ঝোপঝাড়, বৃক্ষতলের লতাগুল্ম ইত্যাদিতেই বেশি দেখা যায়। ফলপ্রধান খাদ্য হওয়ায় পাকা ফলের গাছে বেশি আনাগোনা। তবে কীটপতঙ্গেও অরুচি নেই। গাছের ডাল থেকে সামান্য উড়ে গিয়ে মনোরম ভঙ্গিতে কীটপতঙ্গ ধরে আবার গাছের ডালে এসে খায়।

মার্চ-জুন প্রজননকাল। এ সময় ঘন ঝোপঝাড় বা চারাগাছে শুকনো পাতা, মাকড়সার জাল ইত্যাদি দিয়ে দুর্বল বাটির মতো বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ২-৪টি। ডিমের রং পাটকিলে সাদা, তাতে থাকে অসংখ্য লালচে-বেগুনি ফোঁটা ও দাগ-ছোপ। ডিম ফোটে ১০-১২ দিনে। বাচ্চারা ১৫-১৮ দিনে উড়তে শেখে। তবে এরপর বেশ কিছুদিন মা-বাবার সঙ্গে থাকে। এরা প্রায় ৮ বছর বাঁচে।