কুয়াকাটা না মহিপুর থানা হবে কোনটি?

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মৎস্যবন্দর মহিপুর না কি পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাকে থানায় রূপান্তর করা হবে—এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো উপজেলা। শিববাড়িয়া নদীর দুই পারের মহিপুর ও কুয়াকাটার বাসিন্দারা নিজ নিজ এলাকায় থানা বাস্তবায়নের দাবিতে এক সপ্তাহ ধরে গণসংযোগ, সমাবেশ ও মানববন্ধন করছেন।
কলাপাড়া উপজেলায় আরেকটি থানা স্থাপনের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটন এলাকার স্বার্থে দুই বছর আগে আমি মহিপুর বা কুয়াকাটায় একটি থানার জন্য চাহিদাপত্র (ডিও লেটার) দিই। কিন্তু কুয়াকাটায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে। বিধি মোতাবেক না হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুয়াকাটায় থানা স্থাপনে আপত্তি তোলে। দুটি এলাকাই আমার নির্বাচনী এলাকা। আমি চাই কুয়াকাটা অথবা মহিপুর যেখানেই হোক, একটি থানা চাই।’
সম্প্রতি কুয়াকাটার বাসিন্দারা জানতে পারেন, সেখানে থানা স্থাপনের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আপত্তি জানিয়েছে। এরপর ১৪ আগস্ট থেকে তাঁরা থানা স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। অন্যদিকে তাঁদের দাবির মুখে যাতে মহিপুরবাসী থানা স্থাপন থেকে বঞ্চিত না হন—সেই আশঙ্কায় তাঁরাও থানা স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
কুয়াকাটার বাসিন্দারা বলছেন, সম্ভাবনাময় পর্যটন ও মৎস্যসম্পদের বিরাট ক্ষেত্র হওয়ায় কুয়াকাটাতেই থানা হওয়া উচিত। অপর দিকে মৎস্যবন্দর মহিপুরের বাসিন্দাদের যুক্তি হচ্ছে, কুয়াকাটা উপজেলার একেবারে শেষ প্রান্তের একটি স্থান। নতুন কোনো থানা গঠিত হলে সে ক্ষেত্রে মহিপুর হচ্ছে মধ্যবর্তী ও উপযুক্ত স্থান। এমন সব যুক্তি আর পাল্টা যুক্তির মধ্য দিয়ে দুটি এলাকার বাসিন্দারা থানার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
কুয়াকাটা থানা বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান সরকার কুয়াকাটাকে পৌরসভা করেছে। সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা দেশের আকর্ষণীয় একটি পর্যটনকেন্দ্র। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা আসেন। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে আবাসন ব্যবসার বিরাট ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল-মোটেল। কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকেও প্রতিবছর কয়েক শ কোটি টাকার মাছ দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়। এসব কারণেই কুয়াকাটায় থানা হওয়া খুবই জরুরি।
মহিপুর থানা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম আকন বলেন, মহিপুরে ৪০টি বরফকল, সরকারি কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস, কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এসএসসি, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, ডাকঘর, লঞ্চ-ট্রলার মেরামতের আধুনিক সুবিধাসংবলিত কারখানা, খাদ্যগুদাম, শতাধিক মাছের আড়ত রয়েছে। তা ছাড়া মহিপুরে পুলিশের একটি তদন্তকেন্দ্র আগে থেকেই রয়েছে। প্রশাসনিক দিক দিয়ে হিসাব করলে একটি তদন্তকেন্দ্রকে থানায় রূপান্তর করা অনেক সহজ।