বিদ্যালয়টিতে ২০১৪ সালে একটি গভীর নলকূপ বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। কিন্তু বসানোর কয়েক দিন পর সেটি বিকল হয়ে যায়। এরপর আর মেরামত হয়নি। ওই সময় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি পান করার জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে। পানির জন্য এ-বাড়ি ও-বাড়ি ছুটছে তারা। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
এটি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী শিশুমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। ওই বিদ্যালয়ের মতো উপজেলার ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নলকূপ নেই। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাবে এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩টি। এর মধ্যে পিংড়া, মধ্য বাকরা, উত্তর বহরী, উপাদী শিশুমঙ্গল, বকচর, নাউজান, কোটরাবন্দ, পুটিয়া, মাছুয়াখাল, খিদিরপুর, দক্ষিণ খিদিরপুর, কাজিয়ারা, দক্ষিণ নারায়ণপুর, গোবিন্দপুর, নলুয়া, বদরপুর, গাবুয়া, দক্ষিণ দৌলতপুর, উত্তর কালিকাপুর, কালিকাপুর, কাশিমপুর, রসুলপুর, নন্দীখোলা, বাড়ৈগাঁও ও পূর্ব বাড়ৈগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো গভীর নলকূপ নেই।
গত সোমবার উপাদী শিশুমঙ্গল, গোবিন্দপুর, নন্দীখোলা, বাড়ৈগাঁও, মধ্য পিংড়া, নাউজান ও নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেগুলোর একটিতেও নলকূপ নেই। দুপুরের খাবারের সময় শিক্ষার্থীরা পানির জন্য আশপাশের বাড়িতে যাচ্ছে। কেউ কেউ বিদ্যালয়ের কাছাকাছি পুকুরের দূষিত পানিও পান করছে।
নন্দীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বশির আহম্মেদ বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় দুই শ। তিন বছর আগে বিদ্যালয়ের একমাত্র নলকূপটি নষ্ট হয়। এটি আর মেরামত হয়নি। শিক্ষা কার্যালয়ে নতুন নলকূপ চেয়েও পাননি। খাওয়ার পানির জন্য শিক্ষার্থীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। এতে তাদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
বাড়ৈগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম মজুমদার বলে, ‘স্কুলে নলকূপ না থাওনে পানির কষ্ট পাইতাছি। মাইনষের বাড়ি গিয়া পানি আনি। এভাবে প্রায়ই ক্লাস কামাই যায়। মাঝে মাঝে পুকুরের পানি খাইয়া অসুখে পড়ি।’
গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন বলেন, বছরখানেক আগে তাঁর বিদ্যালয়ের নলকূপটি নষ্ট হয়। তখন থেকে পাশের এক বাড়ির আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান করছে শিক্ষার্থীরা। এতে তারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুলফিকার আলী বলেন, নলকূপহীন বিদ্যালয়গুলোর তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. খোরশেদ আলম বলেন, এসব বিদ্যালয়ে নলকূপ দেওয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।