গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি
২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে গতকাল শনিবার দেশব্যাপী নানা আয়োজনে গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন শোভাযাত্রা, আলোচনা, মোমবাতি প্রজ্বালন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশাল নগরের সদর রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় চত্বর থেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শোভাযাত্রা বের হয়। এর আগে সকাল ছয়টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়।
শোভাযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বরিশাল-২ আসনের সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা ক্ষমার অযোগ্য। দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করেন তাঁরা।
বিকেল চারটায় নগরের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করেছে বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। বিকেল পাঁচটায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরের কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী বধ্যভূমিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যায় বধ্যভূমি ও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনকেন্দ্রে প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতা দিবসভিত্তিক আলোচনা, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য ও নাটক প্রদর্শনী। রাত ১১টা ১০ মিনিটে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সদর রোডের বিবির পুকুর পর্যন্ত আলোর মিছিল বের করা হয়।
খুলনায় শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ করা হয়। একই সঙ্গে এই হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
গতকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গল্লামারী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। বেলা তিনটায় শহীদ হাদিস পার্কে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। সমাবেশ শেষে নগরে গণমিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানসহ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাঁচটায় অফিসার্স ক্লাবে আলোচনা সভা এবং গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। খুলনার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য বাংলার সামনে দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিকেলে একই স্থানে গণহত্যাবিষয়ক মুক্ত চিত্রাঙ্কন এবং সন্ধ্যায় আলোক প্রজ্বালন করা হয়। কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। বিকেল চারটায় ক্যাম্পাসে এক শোক র্যা লি বের করা হয়।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ খুলনা জেলা ও মহানগর শাখার উদ্যোগে বেলা ১১টায় গল্লামারী বধ্যভূমির সামনে মানববন্ধন করা হয়। জাসদের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা।
ফরিদপুরে সকাল সাড়ে আটটার দিকে স্টেডিয়ামের পাশে গণকবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া, পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় সেখানে। এরপর ’৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আবদুর রশিদ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ আলী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আবু নাঈম মো. আবদুর সবুর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এরাদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ প্রমুখ।
এ ছাড়া সন্ধ্যায় জসীমউদ্দীন হলে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নড়াইলে ১০ হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে গণহত্যা দিবস স্মরণ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ১০ হাজার মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। শিশু, কিশোর, রাজনীতিক, ক্রীড়ামোদী ব্যক্তি ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ শিখা প্রজ্বালনে অংশ নেন। আলোর শিখা আলোকিত হয়ে ওঠে মাঠ। শিখা দিয়ে স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার নানা আলপনায় সাজানো হয়। শিখা জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের এক কোণে মঞ্চে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গণসংগীত। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা গণসংগীত পরিবেশন করেন। পাশাপাশি চলে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ।
পিরোজপুরে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তোফায়েল হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম শেখ। দিবসটি উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ ও নেছারাবাদ উপজেলা আওয়ামী লীগ র্যা লি বের করে। সন্ধ্যায় পিরোজপুরে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।
সকালে বাগেরহাট শহরের ডাকবাংলো ঘাট বধ্যভূমিতে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের স্মরণ করে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বক্তব্য দেন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাগেরহাট-৪ আসনের সাংসদ মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সাংসদ মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরিশাল, ফরিদপুর অফিস, খুলনা, পিরোজপুর ও লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি এবং বাগেরহাট সংবাদদাতা]