Thank you for trying Sticky AMP!!

গুমবিষয়ক সনদ প্রশ্নে মত বদলায়নি বাংলাদেশ

গুম থেকে সবার সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদসহ মানবাধিকারের কয়েকটি সনদের অতিরিক্ত স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের প্রশ্নসহ প্রায় ষাটটির মতো সুপারিশ গ্রহণে অসম্মতির বিষয়ে বাংলাদেশ তার মত বদলায়নি। জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান এর কারণ হিসেবে বলেছেন যে এগুলো হয় বাংলাদেশে প্রচলিত আইন ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, নয়তো এখনই ওই সব অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সামর্থ্য বা সক্ষমতা তাঁর দেশের নেই।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা, যা ইউপিআর নামে পরিচিত, তার তৃতীয় দফা পর্যালোচনা সভায় উঠে আসা সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার সময়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে গত সোমবার জেনেভায় ওই পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপারিশগুলো চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।

এবারের ইউপিআরে যেসব সুপারিশ এসেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৭টিতে সম্মতি দিয়েছে, ২৪টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সময় নিয়েছে এবং ষাটটিতে অসম্মতি জানিয়েছে। সুপারিশগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও বিষয় এবং করণীয় বিবেচনায় অনেকগুলোই পুনরাবৃত্তি। রাষ্ট্রদূত আহসান বলেন, তাঁরা যেসব সুপারিশ এখন গ্রহণ করতে পারছেন না, বিষয় হিসাবে সেগুলো চার-পাঁচটির মতো হবে।

যেসব সুপারিশের বিষয়ে বাংলাদেশ অসম্মতি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গুমবিষয়ক সনদ ও ওপরে উল্লিখিত স্বেচ্ছামূলক অতিরিক্ত অঙ্গীকারের দলিল ছাড়াও আছে ১৯৫১-এর উদ্বাস্তুবিষয়ক সনদ, নির্যাতন ও অমানবিক শাস্তি বন্ধের স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দলিল (অপক্যাট), অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক অতিরিক্ত অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকারের দুটি দলিল, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক আইএলও সনদ ১৩৮, ১৩৯ এবং ১৮৯, শিশুশ্রম নির্মূলবিষয়ক সনদ, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য অবসানের আইন, নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ম্যান্ডেট সম্প্রসারণ, সমকামীদের সুরক্ষা এবং সে জন্য ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করার লক্ষ্যে সব ধরনের ফাঁসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, মানহানির অভিযোগের ফৌজদারি দায় বাতিল, উদ্বাস্তু এবং রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের বিচারলাভের অধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

রাষ্ট্রদূত আহসান উদ্বাস্তুবিষয়ক ১৯৫১ সালের সনদ স্বাক্ষরে বাংলাদেশের আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা না করলেও বলেন যে বাংলাদেশ ওই সনদে স্বাক্ষরকারী না হলেও উদ্বাস্তুদের প্রতি মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে আশ্রয়দানের মানবিক দায়িত্ব পালনের জন্য সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করার বিষয়টি তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন।

আর যেসব বিষয়ে আরও সময় চাওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, হেফাজতে নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগগুলো তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি আইনের খসড়া সংশোধন, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ নিরোধক আইনে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিধি, কিশোরদের অপরাধের জন্য দায়ী করার ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়ানো, দাম্পত্য জীবনে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা, নারী-পুরুষের মজুরিবৈষম্য দূর করার মতো বিষয়গুলো। এসব বিষয়ে ইউপিআরের আগামী অধিবেশন, যা সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে, তার আগেই বাংলাদেশকে তার মতামত জানাতে হবে।

বাংলাদেশ সম্মত হওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো, জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, মানবাধিকার আন্তর্জাতিক সনদগুলোর সঙ্গে দেশীয় আইনগুলোর সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা ত্বরান্বিত করা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের বিষয়ে দ্বিতীয় ইউপিআরের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ এবং পূর্ণ বাস্তবায়ন, মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি ও হুমকির ঘটনাগুলো তদন্ত এবং তাদের সুরক্ষা, এ বিষয়ে পুলিশকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জোরদার করা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ, অনলাইন-অফলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারসহ সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জন্য গণতান্ত্রিক সুযোগ নিশ্চিত করা সম্পর্কিত সুপারিশ।