
স্টেডিয়ামে ঢুকতেই চোখ আটকে গেল। প্রধান ফটকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ খেলা কানামাছি, বউচি, এক্কাদোক্কা, গোল্লাছুটের দারুণ কিছু মুহূর্ত।
স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া এসব খেলার মুহূর্তগুলো একটু পরই যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিল। মাঠেজুড়ে শিশু-কিশোরেরা মেতেছে বিস্কুট দৌড়, গোল্লাছুট, মোরগ লড়াই, কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধাসহ গ্রামীণ সব খেলায়। শৈশবে ফিরিয়ে নেওয়া এসব খেলা দেখতে হাজির দর্শকদের করতালি আর মাতামাতিতে মুখর পুরো স্টেডিয়াম।
গতকাল শনিবার রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো ‘বিভাগীয় পর্যায়ে গ্রামীণ খেলাধুলা প্রতিযোগিতা ২০১৪’। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার ১৭০ জন ছেলে ও ২০৪ জন মেয়ে অংশ নেয়।
সকাল নয়টায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত বিভিাগীয় কমিশনার মোহম্মদ মুনির হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন। অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর কবির।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গ্রামের খেলাগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই খেলাগুলোকে আবার জাগিয়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা বিভাগীয় পর্যায়ে খেলছে। এখানে যারা চ্যাম্পিয়ন হবে তারা জাতীয় পর্যায়ে খেলবে। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমাদের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে।’
দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার শিশু-কিশোরেরা অংশ নেয়। ছেলেদের জন্য ছিল চারটি এবং মেয়েদের জন্য ছিল পাঁচটি খেলা। এতে ছেলেদের হা-ডু-ডু খেলায় আটটি, দাঁড়িয়াবান্ধায় সাতটি, মোরগ লড়াইয়ে পাঁচটি, তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার খেলায় চারটি দল অংশ নেয়। মেয়েদের বউচি খেলায় সাতটি, গোল্লছুটে পাঁচটি, দড়িলাফে পাঁচটি, বিস্কুট দৌড়ে তিনটি ও কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলায় তিনটি দল অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতায় বৌচি খেলার অংশ নেন সিরাজগঞ্জ জেলার বনগ্রাম ড. রমজান আলী হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী হেলেনা খাতুন। সে জানায়, তাদের স্কুলে এই খেলার প্রতিযোগিতা হয় না। বাড়িতে মাঝেমধ্যে খেলত সে। একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা বলে, এমন খেলা তার ভালো লাগে।
নওগাঁ উপজেলার শালুকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রেমা বানুও বউচি খেলার প্রতিযোগী। প্রথম রাউন্ডে জিতে তার আনন্দের যেন শেষ নেই।
পাবনার আটঘরিয়া থেকে দাঁড়িয়াবান্ধা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছে সোহেল রানা। সে জানায়, তাদের গ্রামের এখনো এই খেলার প্রতিযোগিতা হয়। জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের এমন প্রতিযোগিতায় এবারই প্রথম অংশ নিয়েছে সে।
প্রতিযোগিতায় হা-ডু-ডু খেলায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, কানামাছি ভোঁ ভোঁতে রাজশাহীর পবা, দাঁড়িয়াবান্ধায় রাজশাহীর চারঘাট, বউচি খেলায় রাজশাহীর বাঘা, গোল্লাছুটে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, একক প্রতিযোগিতায় মোরগ লড়াইয়ে নওগাঁর মাহফুজ্জামান, তৈলাক্ত বাঁশে ওঠায় রাজশাহীর তানোরের পলাশ কুমার দাস, দড়িলাফে পাবনার ঈশ্বরদীর বৈশাখী আক্তার, বিস্কুট দৌড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দির মিথিলা আক্তার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানটির ধারাভাষ্য দেন আবদুর রোকন।