১৪ কিলোমিটার অংশে বাস চলছে না

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে পাহাড়ধসের ক্ষত

১৩ জুনের পাহাড়ধস ও প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বিভিন্ন অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়কের অনেক জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। ছবিটি কাপ্তাইয়ের ব্যাঙছড়ি এলাকা থেকে গত সোমবার দুপুরে তোলা l সৌরভ দাশ
১৩ জুনের পাহাড়ধস ও প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বিভিন্ন অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। সড়কের অনেক জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। ছবিটি কাপ্তাইয়ের ব্যাঙছড়ি এলাকা থেকে গত সোমবার দুপুরে তোলা l সৌরভ দাশ

পাহাড়ধসের এক মাস পরও প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে ছোট যানবাহন চলছে। ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের ১৪ কিলোমিটার অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ধসে গেছে সড়ক। এই সড়কের এক পাশে পাহাড়, অন্য পাশে কর্ণফুলী নদী।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কাপ্তাই পর্যন্ত বাস চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। এত দিন ট্রাক চলাচলও বন্ধ ছিল। পণ্য আনা নেওয়ার জন্য গত সোমবার থেকে এই সড়কে পাঁচ টন ওজনের গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। গত ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড়ধসে সড়কের রাঙামাটি অংশ (কাপ্তাই রাঙামাটির একটি উপজেলা) তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর থেকে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা হয়ে কাপ্তাইয়ের লগগেট এলাকায় গিয়ে সড়কটি শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকা রাঙামাটি জেলার (চন্দ্রঘোনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত) মধ্যে পড়েছে। লগগেট থেকে বড়ইছড়ি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশ ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম থেকে আসা বাস কাপ্তাই থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বের বড়ইছড়িতে এসে থামছে। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে করে যাত্রীদের কাপ্তাই যেতে হচ্ছে। কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা, বড়ইছড়ি ও লগগেট থেকে রাঙামাটির সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিনে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানে স্থানে ফাটল। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লগগেট, ব্যাঙছড়ি, বালুচর, সীতার ঘাট, শিলছড়ি, বনশ্রী এলাকা। লগগেট থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ব্যাঙছড়ি এলাকায় সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে গেছে। ধস ঠেকাতে প্রতিরোধ দেয়াল তৈরি করা হচ্ছে। ব্যাঙছড়ির প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সড়কের বালুচর এলাকায় ১৫ ফুটের মতো অংশ ধসে কর্ণফুলী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালুর বস্তা ফেলে সড়কের অক্ষত অংশের ধস ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এখানে একটি কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বালুচর থেকে চার কিলোমিটার দূরে সীতারঘাট এলাকায় দুটি স্থানে ভেঙেছে সড়ক। এক জায়গায় কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অন্য ভাঙা স্থানগুলোও মেরামতের কাজ চলছে।

ব্যাঙছড়িতে সড়ক সংস্কারের কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন সওজের কর্মী কামাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এক মাস ধরে তাঁরা সড়কটি ঠিক করতে কাজ করছেন।

ব্যাঙছড়ি এলাকায় সোমবার দুপুরে কথা হয় সবজি বিক্রেতা রাজু মারমার সঙ্গে। তিনি বাঁশকোরল (একধরনের সবজি) নিয়ে বড়ইছড়ি যাবেন। অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করার সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাস ও অন্যান্য গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় অটোরিকশার চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে তারা বেশি ভাড়া নিচ্ছে।

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে সবজি ও ফল কাপ্তাই জেটি ঘাট হয়ে সড়কপথে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। সড়কে বড় ট্রাক না চলার কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে বলে জানান সবজি ব্যবসায়ীরা।

সড়কটি এখনো ভারী যান চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় কাঠ, বাঁশ ও মাছ পরিবহন বন্ধ রয়েছে বলে জানান কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিকুল আলম। তিনি বলেন, পাহাড়ধসের পর থেকে এক টন ওজনের গাড়ি চলত। সোমবার থেকে পাঁচ টন ওজনের গাড়ি চলতে শুরু করেছে।

কাপ্তাই কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, এখানকার মানুষের মধ্যে ৮০ ভাগ কোনো না কোনোভাবে মাছ ও কাঠের ওপর নির্ভরশীল। কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। আবার এক মাসের বেশি সময় ধরে কাঠ পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন চরম সমস্যায় পড়েছে।

সড়কের সংস্কারকাজ কবে শেষ হবে জানতে চাইলে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, সড়কটির বেশি ক্ষতি হয়েছে। তিনটি বেইলি সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সড়কের বিভিন্ন অংশের ফাটল স্থায়ীভাবে মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।