এক মণ ধান সেদ্ধ করে শুকিয়ে চাল বানিয়ে বিক্রি করতে মণপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এভাবে ব্যবসা করতে গিয়ে দেউলিয়া হওয়ার ভয়ে উপজেলার বেশির ভাগ চাতালমালিক চাতাল বন্ধ রেখেছেন। ফলে বেকার হয়ে পড়ছেন এর সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শ্রমিক।
উপজেলার পোতাট্টি বাজারের মেসার্স মুনায়েম চালকলের মালিক মুনায়েম হোসেন বলেন, ‘দু-তিন বছর যাবৎ ব্যবসার অবস্থা খারাপ। আগে ধান কিনে চাল করে লাভ না হলেও ধানের তুষ, গুঁড়া আর ছাই বিক্রি করেও চলেছে। এখন ধান কিনে চাতাল চালাতে গিয়ে প্রতি ট্রিপে ২০-২৫ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ব্যাংক থেকে ঋণ করে এভাবে লস খেলে দেউলিয়া হয়ে যাব। তাই চাতাল বন্ধ করে দিয়েছি।’
ওই চাতালে কর্মরত শ্রমিক ছায়েদ আলী বলেন, ‘হামি আর হামার বউ চাতালত কাম কর্যা সংসার চলায়। চাতাল বন্ধ থাকায় এখন কামকাজ ন্যাই।’
উপজেলার সিও অফিস সড়কে অবস্থিত আড়তদার মেসার্স গৌতম রাইস মিলের মালিক রমেন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ‘গত কয়েক বছর হলো চাতাল ব্যবসায়ীদের দুর্দিন যাচ্ছে। ৬১০ টাকার ধানের চালে পড়তা পড়ে ৯৮০ টাকা, কিন্তু চালের বাজার এখন ৯০০ টাকা। চাতাল ব্যবসায়ীরা এক মণ ধান সেদ্ধ-শুকনা করে চাল বিক্রি করতে এসে মণপ্রতি ৯০-১০০ টাকা করে লস খাচ্ছেন।’
উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি হাজি শামসুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আগে এই মোকাম থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রাক চালবোঝাই হয়ে বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যেতেন ব্যাপারীরা। এখন সারা দিনে তিন-চারটি ট্রাক লোড হয় না। ভারতীয় চাল আমদানি করায় কৃষকেরা ধানের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। উপজেলায় প্রায় ৮০০ চাতালের মধ্যে ৭০ ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকের লোন নিয়ে এভাবে ব্যবসা চালালে ব্যবসায়ীরা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়বেন।
কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবসা খারাপ হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বেশ কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী টাকা শোধ করতে পারছেন না। বেশ কয়েকজনকে ব্যাংক থেকে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী পরিশোধ করতে না পারার ভয়ে ঋণও নিচ্ছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে এই উপজেলায় ধানের ফলন হয়েছে ভালো। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় কৃষকের মুখে হাসি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার ধাপসুলতানগঞ্জ হাটে রঞ্জিত জাতের ধান মণপ্রতি ৬১০ টাকা, লাল পাইজাম ধান ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।