জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) । পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বহুল আলোচিত পার্বত্য চুক্তির অন্যতম সাক্ষরকারী। চুক্তির ২৩ বছর উপলক্ষে তিনি চুক্তির বাস্তবায়ন, তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান।
তিন পার্বত্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা না থাকার ফলে এই প্রশাসন ব্যবস্থা জুম্ম জনগণসহ পার্বত্যবাসীর ওপর এক জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। এসব কর্তৃপক্ষ পার্বত্য চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলছে।
পাহাড়ি জনগণের মধ্যে ঐক্য নেই এটা ঠিক নয়। পাহাড়ি জনগণ বরাবরই ঐক্যবদ্ধ। তারা এই শাসন-শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে চায়।
প্রথম আলো: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩ বছর হলো। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সন্তু লারমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি দীর্ঘ ২৩ বছর পরও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি আজ অস্থিতিশীল, উদ্বেগজনক ও হতাশাব্যঞ্জক; সর্বোপরি শাসক আর শাসিতের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নের পরিবর্তে ঔপনিবেশিক কায়দায় আজ জুম্ম জনগণ শাসিত, শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। এটা জুম্ম জনগণের সঙ্গে সরকারের সরাসরি প্রতারণার শামিল ।
সরকার বলেছে চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। আপনারা বলেছেন হয়নি। মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবেন?
সন্তু লারমা: ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যেসব বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি, তার বিবরণসংবলিত প্রতিবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার চুক্তির বাস্তবায়ন বিষয়ে এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করলে চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রকৃত অবস্থা বা চিত্র জানা যাবে।
পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসনের যেসব বিষয় আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার কথা ছিল, তা করা হয়েছে কি?
সন্তু লারমা: ১৯৯৮ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন প্রণীত হয়। ওই আইনের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি এই পরিষদগুলো যথাযথভাবে কার্যকর করা হয়নি। আঞ্চলিক পরিষদের অবকাঠামোসহ পরিষদের ওপর অর্পিত কার্যাবলি কার্যকর করা হয়নি। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের ৩৩টি বিষয়ের (কার্যাবলি) মধ্যে ১৭টি বিষয় (কার্যাবলি) হস্তান্তরিত হয়েছে। তবে তার মধ্যে ১২টি বিষয় অসম্পূর্ণভাবে। অপর দিকে জেলার আইনশৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান, সংরক্ষণ ও উন্নতি সাধন; পুলিশ (স্থানীয়); ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা; বন ও পরিবেশ; মাধ্যমিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় (কার্যাবলি) হস্তান্তর করা হয়নি। পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তরিত বিষয়াদিও যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, তিন পার্বত্য জেলার ডেপুটি কমিশনাররা ও পুলিশ সুপাররা ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি, ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্ট ও পুলিশ রেগুলেশনের দোহাই দিয়ে পূর্বেকার মতো জেলার সাধারণ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত সব ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রয়োগ করে চলেছেন। পক্ষান্তরে আঞ্চলিক পরিষদের সাধারণ প্রশাসন, উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলার ওপর তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধনের এখতিয়ারকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। হলো না কেন?
সন্তু লারমা: সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণেই আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ২০০০ সালে খসড়া নির্বাচন বিধিমালা ও ভোটার তালিকা বিধিমালার ওপরও আঞ্চলিক পরিষদের তরফ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার ওই বিধিমালা দুটি ঝুলিয়ে রেখেছে। নির্বাচন না করে ক্ষমতাসীনেরা দলীয় লোকদের চেয়ারম্যান-মেম্বার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে অন্তর্বর্তী পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালনা করে আসছে। ২০১৪ সালে বর্তমান সরকার অন্তর্বর্তী পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৫ থেকে ১৫ জনে বাড়িয়ে একতরফাভাবে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় এসব অন্তর্বর্তী জেলা পরিষদ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে না। ফলে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ দুর্নীতি, অনিয়ম ও গণবিরোধী কার্যকলাপসহ শাসকগোষ্ঠীর তাঁবেদারিতে লিপ্ত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর স্থানীয় প্রশাসনের খবরদারি কি কমেছে?
সন্তু লারমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের খবরদারি কমার পরিবর্তে কার্যত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলার কর্তৃপক্ষগুলো পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ভূমিকা পালন করে চলেছে। তারা আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে উপেক্ষা করে সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন কার্যক্রম, পর্যটন ইত্যাদি পরিচালনা করে চলেছে। তিন পার্বত্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও ভূমিকা না থাকার ফলে এই প্রশাসন ব্যবস্থা জুম্ম জনগণসহ পার্বত্যবাসীর ওপর এক জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। এসব কর্তৃপক্ষ পার্বত্য চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলছে।
চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার মূল কারণ কি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, না আইনি জটিলতা?
সন্তু লারমা: উগ্র জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার মূল কারণ।
চুক্তি সই করার সময় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে ঐক্য ছিল, এখন তা নেই কেন?
সন্তু লারমা: পাহাড়ি জনগণের মধ্যে ঐক্য নেই এটা ঠিক নয়। পাহাড়ি জনগণ বরাবরই ঐক্যবদ্ধ। তারা এই শাসন-শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে চায়। শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ফলে মুষ্টিমেয় স্বার্থপর ও আদর্শহীন ব্যক্তি জুম্ম জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে, ঐক্য-সংহতির বিপরীতে চুক্তিবিরোধী ও বিভেদকামী ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই পাহাড়িদের মধ্যে গণবিচ্ছিন্ন মুষ্টিমেয় কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক শাসকশ্রেণির তাঁবেদারি করা ও চুক্তিবিরোধী সংঘাতে লিপ্ত থাকার অর্থ পাহাড়িদের মধ্যে ঐক্য নেই, এমন ধারণা সঠিক নয়।
চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে আপনারা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন?
সন্তু লারমা: আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
সরকার বলছে, চুক্তির পর পার্বত্য এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে এবং পাহাড়ি মানুষ এর সুফল পেয়েছে। কী বলবেন?
সন্তু লারমা: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানীয় জল ও স্যানিটেশন-ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদির ক্ষেত্রে যে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হয়নি, তা বলা যাবে না। তবে জাতীয় পর্যায় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থাসহ অধিকাংশ অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব এবং এতদঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে এসব উন্নয়নের ফলে জুম্ম জনগণের সংস্কৃতি ও অস্তিত্বকে দ্রুত ধ্বংসের কিনারে নিয়ে যাচ্ছে এবং এতদঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
সাম্প্রতিককালে পাহাড়িদের মধ্যে গোষ্ঠীগত সংঘাত বাড়ার কারণ কী?
সন্তু লারমা: অদ্যাবধি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেটেলার বাঙালিদের সঙ্গে পাহাড়িদের সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। ভূমি জবরদখলকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো সংঘাত লেগেই রয়েছে। চুক্তির পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেটেলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের ওপর ২০টির অধিক বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, যেখানে পাহাড়িদের শত শত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে, জুম্ম নারীরা নির্যাতিত হয়েছেন এবং অনেক নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। সুবিধাবাদী ও তাঁবেদার ব্যক্তিদের সংগঠিত করে ও মদদ দিয়ে তাদের সশস্ত্রভাবে জুম্ম জনগণ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই এটা কখনোই পাহাড়িদের সঙ্গে পাহাড়িদের সংঘাত নয়। বরং শাসকগোষ্ঠীর সৃষ্ট তাঁবেদার গোষ্ঠীর সঙ্গে পাহাড়ি জনগণের সংঘাত বলা যেতে পারে।
চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি কি কার্যকর আছে?
সন্তু লারমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি এযাবৎ গঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু কমিটির নিজস্ব কোনো কার্যালয় ও জনবল নেই। কমিটির নিজস্ব কার্যালয়, জনবল ও তহবিল ব্যবস্থা না থাকাটা চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করছে। ফলে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
আঞ্চলিক পরিষদ চালানোর মতো অবকাঠামো ও লোকবল আছে কি?
সন্তু লারমা: অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। তবে ভূমি অধিগ্রহণসহ আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পার্বত্য ভূমি সমস্যার সমাধানে গঠিত ভূমি কমিশনের কাজের অগ্রগতি কী। আপনাদের দাবি মেনেই তো বিধি সংশোধন করা হয়েছে।
সন্তু লারমা: ২০০৯ সালে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরে আসার পর শেখ হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১-এর বিরোধাত্মক ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে আইনটি সংশোধন করা হয়। কিন্তু এরপর সরকার আবার ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নে চার বছর ধরে টালবাহানা করে চলেছে। ভূমি কমিশনের এই বিধিমালা প্রণীত না হওয়ায় ভূমি কমিশন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির বিচারিক কাজ শুরু করতে পারেনি। বিগত ২৩ বছরেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে সরকার ও জুম্ম জনগণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্বিক পরিস্থিতি কেমন ?
সন্তু লারমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করে পূর্ববর্তী স্বৈরশাসকদের মতো পার্বত্য সমস্যা সমাধানের পথ কার্যত রুদ্ধ করেছে। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখনো চার শতাধিক অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবৎ রয়েছে। অধিকন্তু চুক্তিকে লঙ্ঘন করে ২০০১ সালে সরকার ‘অপারেশন উত্তরণ’ জারি করে।
জনসংহতি সমিতিসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য ব্যাপক অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচকানাচে অভিযান, তল্লাশি, গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জুম্ম জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ইত্যাদি জোরদার করা হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমিতির স্বাধীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে কার্যত অবরুদ্ধ অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। এভাবেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-পূর্ব পরিস্থিতির মতো অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় হয়ে উঠছে।