
মৌজার নাম সাধুহাটি, বাজারের নাম ডাকবাংলা। তবে যে ডাকবাংলোর নামে বাজারটি প্রতিষ্ঠিত, সেটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বাংলোটি ধসে পড়তে শুরু করেছে।
সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই স্থানে তাঁদের একটি বাংলো আছে, এটাই অনেকে জানেন না। এটি তাঁদের কোনো প্রয়োজনে না আসায় ব্যবহার হয় না। তবে তাঁরা জায়গার খাজনা প্রতিবছর দিয়ে আসছেন।
সড়ক বিভাগের একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪১ সালে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়ক উন্নয়নের কাজ করা হয়। তখনো ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত তেমন কোনো বাজার গড়ে ওঠেনি। সড়কের উন্নয়নকাজ তদারক করতে আসা কর্মকর্তাদের বিশ্রামের কোনো জায়গা ছিল না। তাই সাধুহাটি মৌজার ওই জায়গায় একটি বাংলো নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই বাংলোকে ঘিরে সেখানে একটি বাজার গড়ে ওঠে। সময়ের পরিক্রমায় এটি ডাকবাংলা বাজার বলে পরিচিতি পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, সড়ক বিভাগের ওই বাংলোর স্থানেই বাজারটি প্রথম গড়ে উঠেছিল। পরে সেটা কিছুটা পূর্ব পাশে সরে যায়। তবে দুটি স্থানই সাধুহাটি মৌজাভুক্ত। তিনি বলেন, বাংলোটি সড়কের কাজ চলাকালে সড়ক বিভাগের লোকজন ব্যবহার করতেন। পরেও মাঝেমধ্যে কর্মকর্তারা এখানে আসতেন। কিন্তু গত ৩০ থেকে ৩৫ বছর এটির খোঁজ আর কেউ রাখেন না। ফলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বাংলো ভবনটি।
বাংলোর ভেতরের তিনটি দেয়াল ধসে গেছে। তবে চারপাশের দেয়ালগুলো এখনো ভালো অবস্থায় আছে। বারান্দার একাংশ ভেঙে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। একটি অংশে ছাদের কার্নিশও ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই বাংলোটি চেনে না। সেটা কিসের ভবন, তা-ও বলতে পারে না। ডাকবাংলা বাজারের নামকরণ কীভাবে হয়েছে, সেটাও জানা নেই অনেকের।
স্থানীয় ভূমি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাংলোসহ ওই স্থানে সওজের ৬২ শতক জমি রয়েছে। সওজ এই জায়গার খাজনা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলোর জমিও কেউ কেউ দখল করতে শুরু করেছে।
বাংলোতে বর্তমানে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের একজন সঙ্গী কুমার বেদ। তিনি বলেন, তারা পাঁচটি পরিবার এখানে বাস করে। এই পরিবারগুলোর থাকার কোনো জায়গা নেই। বাংলোটি পড়ে থাকতে দেখে তারা উঠেছে।
ডাকবাংলা বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজীব শেখ বলেন, যে ডাকবাংলোর নামে তাঁদের এই বাজার, তার স্মৃতি ধরে রাখতে বাংলোটি সংস্কার করা জরুরি।
ঝিনাইদহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম আজাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ওই স্থানে বাংলো সম্পর্কে তাঁর তেমন ধারণা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।