রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কবিরাজ ও হাতুড়ে চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। চিকিৎসার নামে তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন অপচিকিৎসা। তাঁদের মিথ্যা কথার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলার তারাগঞ্জ বাজার, ইকরচালী বাজার, বালাবাড়ী বাজার, চিকলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব হাতুড়ে চিকিৎসক-কবিরাজদের বেশির ভাগেরই স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা নেই। তা সত্ত্বেও তাঁরা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে নিজের নামের পাশে নানা রকম উপাধি ও ডিগ্রি জুড়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন হাটবাজার, বাসস্ট্যান্ড, রাস্তার পাশে আসর জমিয়ে আকর্ষণীয় কায়দায় নিজের তৈরি সালসার (ওষুধ) গুণাগুণ বর্ণনা করেন। তাঁরা ওষুধের বোতল তুলে ধরে পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বাত, আমাশয়, মেহ, ডায়াবেটিস, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, যৌনরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দেন। গ্রামের মানুষও খুব সহজে তাঁদের কথায় বিশ্বাস করে ওষুধ কেনেন।
উপজেলার মেনানগর গ্রামের শরিফুল ইসলাম (৩৭) বলেন, ‘মুই দুই মাস আগোত তারাগঞ্জের হাটোত এক কবিরাজের গল্প শুনি ১৬০ টাকা দিয়ে ওষুধ কিনছুনুং। কিন্তু ওই ওষুধ খাওয়ার পর মোর শরীরোত নানান অসুখ ধরে। প্রস্রাব করিবার সময় জ্বালা করছিল, মাথাও ঘুরছিল। পরে মুই তারাগঞ্জ হাসপাতালোত ভর্তি হও। তিন দিন ভর্তি থাকি দুই হাজার টাকার ওষুধ কিনি খেয়া ভালো হও।’
বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের (৫০) সঙ্গে গত শনিবার কথা হয় ইকরচালী বাজারে খোকনের চায়ের দোকানে। নজরুল বলেন, ‘মুইও এক মাস আগোত ইকরচালী বাজারোত এক কবিরাজের বক্তব্য শুনি ১০ টাকা দিয়া পেটের ব্যথার চারটা বড়ি কিনছুনুং। ওই বড়ি খাওয়ার পর মোর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। চার দিন পর ৯৮০ টাকার ওষুধ কিনি খেয়া ভালো হও।’
প্রামাণিকপাড়া গ্রামের মোন্নাফ হোসেন (৪২) ইকরচালী বাজারে এক পায়ে ভর করে ভিক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘মোর পাওখান কবিরাজেরা নষ্ট করি ফেলাইচেং। আগোত মোর পাও কোনা ভালো আছলো। গাছ থাকি পড়ি পাও ভাঙি গেছলো। তারাগঞ্জের হাটের এক কবিরাজের পরামর্শে মুই ভাঙা পাও কোনাত তেল মালিশ করছুনুং। তেল মালিশ করার পর মোর পাও কোনা পচি গেইছে। থাকিবার ঘরটা বেচেয়া পাও কোনা কাটি ফেলাছুং। এলা এক পায়ের ওপর ভিক্ষা করি খাওছুং।’
তারাগঞ্জ বাজারে গত শুক্রবার গানের আসর বসিয়ে মনিরুল ইসলাম নামের এক কবিরাজ বিভিন্ন প্রকার রোগ নিরাময়ের শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে ওষুধ বিক্রি করেন। তিনি দাবি করেন, পুরোনো বই পড়ে গাছগাছড়া, শেকড়-পাতা দিয়ে উন্নত জাতের ওষুধ তৈরি করে মানুষের চিকিৎসা করছেন। তাঁর ওষুধ মানুষ খেলে আর তেল মালিশ করলে সব ধরনের রোগ ভালো হয়। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই, আমার ওষুধ খেলে মানুষের উপকার না হলেও ক্ষতি হয় না।’
গত শনিবার সকালে ইকরচারী বাজারে জিলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওষুধ বিক্রির প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাঁর দাবি, এক শিশি ওষুধে সাত ধরনের অসুখ ভালো হবে। কীভাবে এতগুলো অসুখ ভালো হবে, জিজ্ঞেস করতেই তিনি ছটকে পড়েন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আফরোজা বেগম বলেন, অপচিকিৎসা মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। থানার ওসি লতিফ মিয়া বলেন, কবিরাজের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।