Thank you for trying Sticky AMP!!

তিন কিলোমিটারে নয়টি স্কুল, মিলছে না শিক্ষার্থী

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে নয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ-সাতজন করে ছাত্র আছে। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধা। বিদ্যালয় ও বসতঘর দেখতে একই রকম। জাতীয় পতাকা না টাঙালে বিদ্যালয় কোনটি, তা বোঝা যায় না।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ বলেন, এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বরইকান্দি থেকে কুতুবপুর বাজারের মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর নির্মিত অস্থায়ী ঘরে চলছে। ওই এলাকায় জনবসতি কম। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীও কম। উপজেলার বিভিন্ন চরে এসব বিদ্যালয় ছিল। ২০১৭ সালের নদীভাঙনে বিদ্যালয়গুলোর ভবন বিলীন হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিদ্যালয়গুলো যেসব চরে জনসংখ্যা বেশি, সেসব চরে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদ্যালয় চর এলাকায় রয়েছে। ২০১৭ সালে বড় বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে নয়টি বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে চলে যায়। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে শিক্ষকেরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর ছোট টিনের ঘর স্থাপন করে বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম চালু করেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ের টিনের ঘর নির্মাণে এক থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। বিদ্যালয়গুলো কুতুবপুর ও চন্দনবাইশ ইউনিয়নে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বরইকান্দি এলাকায় ৪২ নম্বর নিজ কর্ণিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পাশে ৮-১০টি বসতঘর রয়েছে।

বিদ্যালয়ের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এটি ৮৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভাঙনের কারণে বাঁধে স্থানান্তর করার পর একটি কক্ষে চলছে এর কার্যক্রম। এ কক্ষের উত্তর দিকে চার শিক্ষক বসেন। মধ্যে কার্যালয়। দক্ষিণ দিকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এ বিদ্যালয়ে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শ্রেণিতে চারজন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে ছয় এবং শিশু শ্রেণিতে সাতজন শিক্ষার্থী আছে। তবে চতুর্থ শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই।

এ বিদ্যালয়ের ৪০ মিটার দক্ষিণে বাঁধের পশ্চিম পাশে চিলাকাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কুতুবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের রেজিস্টারে ৫২ জন শিক্ষার্থীর নাম রয়েছে। তবে গত ২ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থী ছিল ১২ জন। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ দুজন শিক্ষক ও দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। এখানে নিয়মিত পাঠদান হয় বলে দাবি করছেন প্রধান শিক্ষক লিজা আক্তার।

গত ২ মে ৪৩ নম্বর কর্ণিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজনের মধ্যে তিনজন শিক্ষক ছিলেন। উপস্থিত শিক্ষার্থী সাতজন। বিদ্যালয়ের নথিতে মোট শিক্ষার্থী ২৪ জন। টিনের বেড়া আর ছাউনি দিয়ে তৈরি এক কক্ষের বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকিয়া সুলতানা শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণে রয়েছেন। অন্য শিক্ষক ছুটিতে।

এর একটু দক্ষিণে নিজ কর্ণিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষকের বিপরীতে নথিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪০ জন। কিন্তু গত ২ মে তৃতীয় আর চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। টিনের তৈরি এক কক্ষের বিদ্যালয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক উম্মে হাবিবা বলেন, ‘শিক্ষার্থী না থাকলে কার ভালো লাগে? স্কুলে এসে বসে থাকা বিরক্তিকর।’

কুতুবপুর বাজারের কাছে আটাচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এক কক্ষের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশিক্ষণে। সহকারী শিক্ষক সাবিনা খাতুন দাবি করেন, এ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৫২ জন। কিন্তু ২ মে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি মিলে উপস্থিত ছিল আটজন।

চন্দনবাইশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ মে দুপুরে গিয়ে চারজন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। কিন্তু নথি অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানে ৭৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সহকারী শিক্ষক ফাতেমা-তুজ-জহুরা বলেন, সম্প্রতি ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা হয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম।

১৩৩ বছরের পুরোনো নিজ চন্দনবাইশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানে খাতা–কলমে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৬ জন। শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। সহকারী শিক্ষক নাসরিন আক্তার ২ মে তিনজন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছিলেন। এ বিদ্যালয়ও এক কক্ষের। পাশে তিন-চারটি বসতঘর।

চন্দনবাইশা ইউনিয়নের থানার মাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক রয়েছেন। রেজিস্টারে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩ থাকলেও ২ মে বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল আলম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মফস্বলে দুই কিলোমিটার পরপর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যায়। কিন্তু এখানে এক থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে নয়টি স্কুল। ফলে শিক্ষার্থী পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এ বিদ্যালয়গুলো জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি, এমন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হবে।