Thank you for trying Sticky AMP!!

তিন বছর আগে রিট হয়েছিল ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে

প্রদীপ কুমার দাশ

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার একটি ঘটনায় বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে তিন বছর আগে হাইকোর্টে একটি রিট হয়েছিল। তখন তিনি কক্সবাজারের মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর মহেশখালী থানায় মামলা করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি।

নিহত ব্যক্তির স্ত্রী এজাহার (লিখিত অভিযোগ) দাখিল করলে তা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করতে তখন ওসিকে (প্রদীপ কুমার দাশ) নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই আদেশ বাতিল করে নতুন করে রিট শুনানি করতে বলেন। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ওই রিটের কার্যক্রম আর এগোয়নি।

ঘটনাটি ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির। সেদিন রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মহেশখালীর মাঝেরপাড়া এলাকার বাসিন্দা লবণচাষি আব্দুস সাত্তার। ‘ক্রসফায়ারের’ নামে পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয় বলে তখন অভিযোগ তোলেন তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম। অন্যদিকে তখন পুলিশ দাবি করেছিল, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সাত্তার। মহেশখালী থানার বর্তমান ওসি মো. দিদারুল ফেরদৌস গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাত্তার তালিকাভুক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে তখন অস্ত্রসহ তিনটি মামলা ছিল। তবে হামিদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী লবণচাষি ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর দুই ছেলে পানের বরজে দিনমজুরি করে সংসার চালান।

রিট আবেদনকারী হামিদা বেগমের আইনজীবী রাশেদুল হক গতকাল মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনকারী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে প্রতিকার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। যে কারণে রিটটি আর শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবেদনকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রদীপ কুমার দাশ ২০১৮ সালের অক্টোবরে মহেশখালী থেকে টেকনাফ থানায় বদলি হন। মহেশখালীর মতো টেকনাফেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান, যা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা হিসেবে প্রথমে প্রচার করা হয়। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ। সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর তাঁকে টেকনাফ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে।

মহেশখালীর ওই ঘটনার বিষয়ে আইনজীবী রাশেদুল হক জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনায় পরপরই থানায় এজাহার দায়ের করতে গিয়ে বিফল হন হামিদা বেগম। পরে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রদীপ কুমার দাশ) বরাবর ডাকযোগে এজাহার পাঠান ভুক্তভোগী। যেখানে প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৯ জনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, হামিদা বেগমের করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ৭ জুন আদেশ দেন। এতে বলা হয়, হামিদা বেগম এজাহার দাখিল করলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তা তাৎক্ষণিক গ্রহণ করতে হবে। এই আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র সচিবের (জননিরাপত্তা বিভাগ) পক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ১৩ মে আপিল বিভাগ আদেশ দেন। এতে রুল ইস্যু না করে এজাহার গ্রহণ করতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে ওই রিটটি মোশন (নতুন মামলা) হিসেবে নতুন করে শুনানি করতে বলা হয়।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে করা আবেদনের সঙ্গে কিছু কাগজপত্র যুক্ত করা হয়। এতে মহেশখালী থানায় আব্দুস সাত্তারের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি (যেদিন বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন) তিনটি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। আবেদনের সঙ্গে যুক্ত এক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের তালিকায় আব্দুস সাত্তারের নাম রয়েছে।

নিহত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা বেগম গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকের বিরোধ ছিল। প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে টাকার বিনিময়ে মহেশখালী থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। থানায় মামলা করতে না পেরে ঘটনার বিচার চেয়ে তিনি উচ্চ আদালতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

হামিদা বেগম বলেন, মামলা না করার জন্য প্রদীপ কুমার দাশসহ প্রতিপক্ষের লোকজন তখন তাঁকে হুমকি দিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর দুই তরুণ ছেলে মো. সাওন ও মো. সাগরকে গুলি করে হত্যা করার পাশাপাশি তাঁকেও ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। স্বামী নিহত হওয়ার পর দুই ছেলেকে হারাতে চাননি বলেই মামলা নিয়ে আর অগ্রসর হননি তিনি।