দোকানে প্রয়োজনীয় পণ্য থরে থরে সাজানো। কিন্তু কোনো বিক্রেতা নেই। ক্রেতারা পণ্য কিনে পণ্যের গায়ে লেখা দাম দেখে হিসাব করে নির্ধারিত বাক্সে টাকা রাখছেন। পণ্য নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এ দৃশ্য কোনো গল্প, নাটক বা সিনেমার নয়। বাস্তবেই হতে যাচ্ছে এ ধরনের দোকান। নাম হবে ‘সততা স্টোর’। উদ্যোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। আর বাস্তবায়ন করবে দেশের বিভিন্ন এলাকার নির্ধারিত কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, সততা অভ্যাস ও চর্চার বিষয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততার চর্চা তৈরির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। ইকবাল মাহমুদ বলেন, কমিশন দুর্নীতি দমনের চেয়ে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামী প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা, দুর্নীতিকে ঘৃণা করার মানসিকতা ও সততার চর্চা তৈরির মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে চায় কমিশন।
এর আগে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সততা সংঘ গঠিত হয়েছে। সারা দেশে এ সংখ্যা ২১ হাজার ৭৪৪।
দুদক সূত্র জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৬৪ জেলার প্রতিটিতে একটি বালক ও একটি বালিকা বিদ্যালয়ে এ ধরনের দোকান খোলা হবে। পরে এর ব্যাপ্তি আরও বাড়ানো হবে। সততা স্টোরে খাতা, কলম, পেনসিল, ইরেজার, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, রং পেনসিলসহ শিক্ষাসামগ্রী এবং চিপস, বিস্কুটসহ খাবার জিনিস থাকবে। এ ছাড়া দোকান পরিচালনা কমিটির অনুমোদনক্রমে অন্যান্য পণ্যও রাখা হবে। সব পণ্যের দাম হবে বাজারমূল্যের সমান।
দুদকের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সততা স্টোর স্থাপন ও পরিচালনা বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করেছে সংস্থাটি। নীতিমালার বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল। চিঠিতে উদ্যোগটি দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সততা স্টোর গঠন ও পরিচালনা বিষয়ে তৈরি নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিক্রেতাবিহীন ওই দোকান স্কুল ক্যাম্পাসের উপযুক্ত কোনো কক্ষে স্থাপন করা হবে। দোকানের পুঁজির ব্যবস্থা করবে পরিচালনা পর্ষদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে দোকানের জন্য প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহ করে বিনিয়োগ করবে।
ওই দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনার বিষয়েও নীতিমালা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, দোকানে ঢোকার সময় রেজিস্ট্রার খাতায় শিক্ষার্থীর নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর লিখতে হবে। পরে পণ্যের মূল্যতালিকা দেখে কেনা পণ্যের দাম দোকানে রাখা ক্যালকুলেটরে হিসাব করে পরিশোধ করতে হবে। ক্রেতাকে একটি কাগজে পণ্যের নাম ও টাকার পরিমাণ লিখে টেবিলে রাখা খামে ভরে নির্ধারিত ক্যাশবাক্সে ফেলতে হবে।
চাহিদামতো পণ্য না পাওয়া গেলে সেখানে রাখা আরেকটি রেজিস্ট্রারে লিখে অগ্রিম ফরমাশ দেওয়া যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সংশ্লিষ্ট মহানগর/জেলা/উপজেলার সভাপতি বা সম্পাদক কর্তৃক গঠিত কমিটি সততা স্টোর পরিচালনা করবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদ নেই, সেখানে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক মনোনীত তিনজন শিক্ষককে নিয়ে গঠিত কমিটি তা পরিচালনা করবে।
পর্যবেক্ষণ ও তদারকি
নীতিমালা অনুযায়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের বিশেষ মনিটরিং কমিটি সততা স্টোরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও তদারক করবে। ওই কমিটি মাসে অন্তত একবার বৈঠক করে হিসাব যাচাই ও ক্রয়যোগ্য সামগ্রীর তালিকা করে প্রয়োজনীয় অর্থ স্টোর পরিচালনা কমিটির কাছে দেবে।
কমিটিকে এক দিন পর পর স্টোর পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কমিটি পণ্যের চাহিদা নির্ধারণ, নিয়মিত পণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা, পণ্যের গায়ে মূল্য লেবেল লাগানোর কাজ করবে। আর পণ্যের মূল্যতালিকা স্টোরের দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো থাকবে।
আরও পড়ুন...
সততা চর্চার ‘অনেস্টি শপ’