
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাষ হচ্ছে একটি সুস্বাদু বিদেশি ফল। বাইরের দেশে ফলটির সবচেয়ে পরিচিত নাম ‘প্যাশন’। তবে অঞ্চলভেদে এর ভিন্ন নামও আছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচিত ‘পারপেল গ্রানাডিলা’ নামে। ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যাসিফ্লোরা ইডিউলাস’। মিষ্টি স্বাদ ও উপকারিতার কারণে অনেক দেশেই ফলটি বেশ জনপ্রিয়।
তিন বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই বিদেশি ফলের চাষ শুরু করেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল। বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের আঙিনায় ২০১১ সালের মাঝামাঝিতে প্যাশন ফলের দুটি চারা লাগান তিনি।
মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, চারা লাগানোর দুই বছর পর গত বছর অল্প কিছু ফল ধরেছিল। তবে এ বছর দুটি গাছে প্রায় ছয় শ ফল ধরেছে। এই বিদেশি ফল সম্পর্কে তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফলটি চাষ হয়। বাংলাদেশে এখনো বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ শুরু হয়নি। তবে এ দেশের আবহাওয়া এ ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
শিক্ষক মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, প্যাশন গাছে বছরে দুবার ফল ধরে। পূর্ণাঙ্গ ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ হয়। তবে পরিণত অবস্থায় হলুদ বা গাঢ় বেগুনি রং ধারণ করে। ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রো-ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। এ ফলের জুস পটাশিয়ামের একটি বড় উৎস। ১০০ গ্রাম ফল খেলে ৯৭ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম ও জিংক ০.১ মিলিগ্রাম। এ ফলটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। হাঁপানি ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও এই ফল বিশেষ উপকারী।
ফলটি মিষ্টি স্বাদের হলেও বাংলাদেশের মাটিতে যে ফল জন্মেছে, তা কিছুটা টক। জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে এ ফলে মিষ্টি স্বাদ আনার চেষ্টা চলছে।
মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘ঢাকার কিছু দোকানে এ ফল কিনতে পাওয়া যায়। এক কেজির দাম পড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আমাদের দেশে এত টাকায় এ ফল কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। আমরা গবেষণার মাধ্যমে ফলটিতে জীবপ্রযুক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করছি। আশা করছি জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফলটিতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারলে আমাদের দেশেও বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষ শুরু করা যাবে।’
বাসা বা বাড়িতে এক ফালি উঠোন থাকলে অন্যান্য দেশীয় ফলের সঙ্গে এই বিদেশি ফলের চাষ অসম্ভব কিছু নয় বলে মনে করেন মোহাম্মদ সোহায়েল। তিনি বলেন, ছায়াযুক্ত স্থানে একটি প্যাশন ফলের চারা রোপণ করে নিয়মিত যত্ন নিলেই দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফল পাওয়া সম্ভব। এ জন্য বাড়তি তেমন কোনো যত্নের প্রয়োজন নেই।
মোহাম্মদ সোহায়েল ফলটি সম্পর্কে এত প্রয়োজনীয় তথ্যের সঙ্গে একটি ভিন্নরকম তথ্যও জানান। তিনি জানান, প্যাশন ফলের গাছে যে ফুল হয়, সেটিই প্যারাগুেয়র জাতীয় ফুল।