Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশে আয়শাসহ ৪৯ নারী বন্দী কনডেম সেলে

  • মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের যে বিশেষ সেলে রাখা হয়, সেটিই কনডেম সেল

  • দেশের ৬৮ কারাগারে মোট ৮৮৮ জন বন্দী কনডেম সেলে

  • কনডেম সেলের বন্দীদের জন্য আচরণবিধিও ভিন্ন

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর আয়শা সিদ্দিকাকে বরগুনা কারাগারে নেওয়া হয়

বরগুনায় রিফাত শরিফ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নিসহ মোট ৮৮৮ জন বন্দী দেশের ৬৮ কারাগারের কনডেম সেলে আছেন। এই বন্দীদের মধ্যে ৪৯ জন নারী। দেশে এখন পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি।

কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আদালতে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর আসামিকে কারাগারের কনডেম সেলে নেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগপর্যন্ত আসামিদের কনডেম সেলেই রাখা হয়। গত বছরের জুন মাসে বরগুনায় সংঘটিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শাসহ ছয়জনকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। গত বুধবার বরগুনার আদালত রায় ঘোষণার পর ছয়জনকে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী কারাগারের কনডেম সেলে নেওয়া হয়েছে।

কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) তৌহিদুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত ৪৯ জন নারী দেশের বিভিন্ন কারাগারের কনডেম সেলে আছেন। তবে দেশে এখন পর্যন্ত কোনো নারীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি।

কনডেম সেল কী?

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগারের যে বিশেষ সেলে রাখা হয়, সেটিই কনডেম সেল। কারাগারে থাকা অন্য বন্দীদের তুলনায় কনডেম সেলের বন্দীদের জন্য ভিন্ন আচরণবিধি রয়েছে। অন্য বন্দীদের থাকার জায়গার সঙ্গেও কনডেম সেলের বেশ পার্থক্য আছে।

সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের জেল কোড বা কারাবিধিতে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলে রাখার মতো কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকলেও তাঁদের আলাদা ধরনের কক্ষে রাখা হয়। এটিকে একধরনের রেওয়াজ বলা যেতে পারে। একটি কনডেম সেলে সাধারণত একজন বা তিনজন বন্দী রাখা হয়। তিনি বলেন, সাধারণত ধারণা করা হয়, কনডেম সেলে দুজন বন্দী থাকলে তাঁরা কারাগার থেকে গোপনে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। তবে তিনজন থাকলে পরিকল্পনা আর গোপন থাকে না। ওই ধারণা থেকেই দুজন বন্দীকে একটি কনডেম সেলে রাখা হয় না।

Also Read: আয়শাসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল করতে হবে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে

শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, কনডেম সেলের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য ছোট আকারের জানালা থাকে। আর এই সেলে থাকা বন্দীদের দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সেলের বাইরে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। কারাবিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার পর একজন বন্দীকে কারাগারে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখা, দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হলেও আলাদা কক্ষে রাখার বিষয়টি আইনে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। একজন বন্দী থাকার কনডেম সেল সাধারণত ১০ ফুট বাই ৬ ফুট আয়তনের থাকে। আবার অনেক কারাগারে সেলের মাপ কিছুটা বড় থাকে। কনডেম সেলের মধ্যে বন্দীর থাকা-খাওয়া, গোসল ও টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

শামসুল হায়দার আরও বলেন, আগে কনডেম সেলের বন্দীদের নিজেদের সেলের বাইরে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। সেল থেকে বছরের পর বছর বের হননি, এমন উদাহরণও আছে। কিন্তু একটি ছোট ঘরের ভেতরে দীর্ঘ সময় থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই বর্তমানে কনডেম সেলের বন্দীদের দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বাইরে চলাফেরা করতে দেওয়া হয়। কনডেম সেলে থাকা বন্দীরা মাসে এক দিন দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান। বিশেষ বিবেচনায় কখনো কখনো ১৫ দিনের মধ্যেও কনডেম সেলের আসামির সঙ্গে দর্শনার্থীদের দেখা করতে দেওয়া হয়।

শামসুল হায়দার বলেন, যত দিন পর্যন্ত উচ্চ আদালত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল না করছে, তত দিন পর্যন্ত বন্দীকে কনডেম সেলেই থাকতে হয়। কারাবিধি অনুসরণ করে কনডেম সেল থেকে গিয়েই আদালতের কার্যক্রমে যোগ দিতে হয় বন্দীকে।

Also Read: সকালে বাবা-মাকে ফোন করে কান্নাকাটি করেছেন আয়শা

কারা সূত্র জানায়, সাধারণ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা এক কক্ষে অনেকে থাকেন, কক্ষের বাইরে ঘোরাফেরার সময়ও বেশি পান। তাঁদের খাবারের জন্য ডাইনিংয়ে যাওয়া, গোসলের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। দর্শনার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রে সাধারণ বন্দীরা বেশি ছাড় পান।

বরগুনা জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, এই কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য কোনো নারী আসামি নেই। ফলে আয়শা একাই কনডেম সেলে আছেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামিকেও কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। রিফাত হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি ছাড়া কনডেম সেলে আপাতত অন্য কোনো বন্দী নেই। জেল সুপার বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী ছয় বন্দীকেই কনডেম সেলে থালা, বাটি ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি আসামিকে কারাগারের পক্ষ থেকে দুই সেট পোশাক দেওয়া হয়েছে। এখানে তাঁরা কারা বিধি অনুযায়ী এই পোশাক পরবেন।