পুরান ঢাকার ঐতিহ্য

ধনু বেপারী হলুদ মসজিদ

রাজধানীর নারিন্দার শরৎ​গুপ্ত রোডে ঐতিহ্যবাহী ধনু বেপারী হলুদ মসজিদ l হাসান রাজা
রাজধানীর নারিন্দার শরৎ​গুপ্ত রোডে ঐতিহ্যবাহী ধনু বেপারী হলুদ মসজিদ l হাসান রাজা

বয়সের কথা জানতে চাইলে কেউ বললেন সোয়া শ বছর। কেউ বললেন দেড় শ। কেউ বা এর দিকে ওর দিকে চাইলেন। একজন সংকোচের হাসি হেসে বললেন, ‘তা ভি খোলাসা কইরা বলতে পারতাছি না।’

পুরোনো স্থাপনার গায়ে সাধারণত নির্মাণ সময়ের সাল-তারিখ উৎকীর্ণ নামফলক থাকে। কিন্তু এর গায়ে কিছুই নেই।

হলুদ মসজিদ। পুরান ঢাকার নারিন্দাবাসীর কাছে একটি গর্বের নাম। ঐতিহ্যের পুরান ঢাকার আরও একটি মুক্তোদানা।

নাম হলুদ মসজিদ। দেখতেও হলুদ। পুরো নাম ধনু বেপারী হলুদ মসজিদ। কিন্তু কে এই ধনু বেপারী? কী তাঁর পরিচয়?

২ জানুয়ারি দুপুরে নারিন্দার শরৎগুপ্ত রোডে মসজিদটির সামনে দাঁড়িয়ে কথা হলো নবীন-প্রবীণ অনেকের সঙ্গে। কিন্তু কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারলেন না। নানা সূত্র ধরে খোঁজ মিলল মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনের। এই জাহিদ হোসেন
হলেন ধনু বেপারীর ষষ্ঠ উত্তর পুরুষ। সরকারের প্ল্যানিং কমিশনের জয়েন্ট চিফ ছিলেন। এখন নারিন্দায় নিজ বাড়িতে অবসর জীবনযাপন করছেন।

জাহিদ হোসেনের কথায়, ধনু বেপারী, শরৎ গুপ্ত এরা ছিলেন নারিন্দার ভূস্বামী। এখানকার বেশিরভাগ সম্পত্তির মালিক এরাই ছিলেন। তা ছাড়া ধনু বেপারীর নানা কারবার ছিল। ১৮৫০ সালের দিকে ধনু বেপারীর মৃত্যু হয়। তাঁর মত, ১৮৪০ থেকে ’৫০ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ হয়। সেই হিসেবে মসজিদটির বয়স ১৭০ বছরের কাছাকাছি।

পারিবারিক ইতিহাসের ধুলো জমানো খাতার পাতা থেকে জাহিদ হোসেন বের করে আনলেন তাজা ইতিহাস। ধনু বেপারীর ছিলেন দুই নাতনি। সায়রা বিবি ও আমিনা বিবি। আমিনা বিবির স্বামীর নাম মনির হোসেন। সায়রা বিবির বংশধরদের কথা জানা যায় না। অনেকে বলেন তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। আমিনা বিবি-মনির হোসেন দম্পতির ছেলে আজাহার হোসেন। আজাহার হোসেনের দুই ছেলে মোজাফফর হোসেন ওরফে চান মিয়া ( কমিশনার ছিলেন) ও জহির হোসেন ওরফে মাহতাব মিয়া। এই জহির হোসেনের ছেলেই জাহিদ হোসেন।

আজাহার হোসেনের ছেলেরা দীর্ঘদিন এই মসজিদের মোতওয়াল্লী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মৃত্যুর পর এখন কমিটির মাধ্যমে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে।

মনির হোসেন নারিন্দার মানুষের কাছে পরিচিত নাম। জীবনের বড় অংশজুড়ে তিনি জনপ্রিয় কমিশনার ছিলেন। তার নামে এখানে সড়ক আছে। এ সম্পর্কে ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ বইতে নাজির হোসেন লিখেছেন, ‘ঢাকার পৌর কমিশনার মুনসী মুনীর হোসেন (এই বানানে লিখেছেন) তথা মুনীর হোসেন বেপারীর নামে ১৯২২ সালে নারিন্দার উত্তর পার্শ্ব এলাকাটি মুনীর হোসেন লেন নামকরণ করা হয়।’

ধনু বেপারী মসজিদটির যে কাঠামো নির্মাণ করেছিলেন তার কোনো চিহ্ন আজ অবশিষ্ট নেই। জাহিদ হোসেনের কথায়, সেটি ছিল ছোট আকারের একটি একতলা মসজিদ। দিনে দিনে এলাকায় জনবসতি বাড়তে থাকে। মসজিদটি বড় করার প্রয়োজন হয়। সেই মতো ১৯৪০ এর দশকে বর্তমান কাঠামোটি নির্মাণ করা হয়। আর চারতলা, পাঁচতলা সম্প্রসারিত হয়েছে আরও পরে।

জুমার দিনে হলুদ মসজিদে দেড় থেকে দুই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। চার ও পাঁচতলায় মাদ্রাসা বর্তমানে মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে।