Thank you for trying Sticky AMP!!

পদ্মা সেতু কেন জরুরি

দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন থেকে শুরু করে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও প্রবৃদ্ধির বিকাশে পদ্মা সেতু সহায়ক হবে। গত এক যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। অর্থনৈতিক তৎপরতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সেই বিবেচনায় এখন পদ্মা সেতুর তাৎপর্য অনেক বেশি।

পদ্মা সেতুর বড় দিক হলো মধ্যপশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ফেরি পারাপারের দীর্ঘ সময় অপচয় ও ভোগান্তির অবসান। এর অর্থনৈতিক উপযোগ হচ্ছে কর্মমুখী যাত্রী ও পণ্যবাহী যানের সময়, জ্বালানি খরচ, শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়। এ অঞ্চলকেন্দ্রিক কাঁচা ও পচনশীল কৃষি ফলন ও মৎস্য অর্থনীতিকে গতিশীল করবে পদ্মা সেতু।

পদ্মা, যমুনা, মেঘনা—এই তিন নদী বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে মূল তিনটি ভাগে ভাগ করেছে। ঢাকা ঘিরে মধ্যাঞ্চল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ নিয়ে পূর্বাঞ্চল এবং রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে সড়ক যোগাযোগ বিস্তৃত হয়েছে। মেঘনা, মেঘনা-গোমতী, বঙ্গবন্ধু ও ভৈরব সেতু নির্মাণের ফলে মধ্য, পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সম্ভব হয়। সারা দেশকে সড়ক যোগাযোগে এক সুতায় বাঁধার কাজটি আটকে ছিল পদ্মা নদীর কারণে।

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া দিয়ে ফেরিতে ওঠার পর পদ্মা নদী পার হতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া দিয়ে লাগে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট। মাওয়া ফেরিঘাটে যাত্রীবাহী যানবাহনকে গড়ে দুই ঘণ্টা ও পণ্যবাহী যানকে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়। অবশ্য ঈদ, বড় ছুটি অথবা শীতে ঘন কুয়াশায় ফেরিঘাটে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টাও অপেক্ষা করার নজির রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দারিদ্র্য মানচিত্র অনুযায়ী, পদ্মার ওপারের ২১টি জেলায় ১৩৩টি উপজেলা আছে। এর মধ্যে ৫৩টি উপজেলা উচ্চ দারিদ্র্য ঝুঁকিতে আছে। এসব উপজেলার মধ্যে ২৯টি বরিশাল বিভাগে। এ ছাড়া ৪২টি উপজেলা মধ্যম দারিদ্র্য এবং ৩৮টি নিম্ন দারিদ্র্য ঝুঁকিতে আছে। সেতু চালুর পর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হলে দ্রুত ওই এলাকার মানুষের আয় বেড়ে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।

বিনিয়োগের দিক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের সময় ও দূরত্ব। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি হয়। এসব পণ্যবাহী ট্রাককে যমুনা সেতু ঘুরে কিংবা মাওয়া ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। পরিবহন খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, বেনাপোল থেকে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আসতে এখন ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাগে। পদ্মা সেতু হলে ৬-৭ ঘণ্টায় পণ্য পরিবহন করা যাবে। এতে আমদানি-রপ্তানিতে খরচ ও সময় বাঁচবে।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে এই সেতু। যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। ২০০৫ সালে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালু হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।