
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বালু নদ পর্যন্ত পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের (৩০০ ফুট) দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে। এই খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৩ কিলোমিটার। গতকাল শনিবার সকালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ডুমনি এলাকায় খননকাজের উদ্বোধন করেন রাজউকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহমান। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। খরচ হবে ৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯০ একর ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। অধিগ্রহণের কাজ এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। এই হিসাবে, প্রতি শতক জমির দাম পড়েছে ৪৮ লাখ টাকার বেশি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে ঢাকার নিকুঞ্জ, বারিধারা, জোয়ারসাহারা, ডিওএইচএস, সেনানিবাস, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কালাচাঁদপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতা নিরসনের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকল্পে ১০০ ফুট খাল ছাড়াও প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়ক, ৩৯ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, চারটি ইউলুপ, খালের ওপর ১৩টি সেতু, চারটি পদচারী-সেতু এবং পাঁচটি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে।
এ ছাড়া একটি পাম্পহাউস ও ১২টি ওয়াটার বাস স্টপ ছাড়াও ৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার স্টর্ম স্যুয়ার লাইন নির্মাণ করা হবে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এর সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে দুপাশেই ৬ মিটার সার্ভিস সড়ক থাকবে। এরপর ৩ মিটার প্রশস্ত হাঁটাপথের পর ৩০ মিটার খাল থাকবে। খালের ওপারে আবার ২ মিটার হাঁটাপথ ও ৬ মিটার সার্ভিস রোড থাকবে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়।
গতকাল খালের খননকাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজউকের চেয়ারম্যান ২০১৮ সালের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে, পুরো কাজ শেষ হলে খাল, আনুষঙ্গিক স্থাপনাসহ পুরো প্রকল্পটি সৌন্দর্যের একটি নিদর্শন হয়ে উঠবে। এই পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে সেনাবাহিনীসহ সবার সহযোগিতা চান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) এ এস এম রায়হানুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার আনিস, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রকল্পের রাজউক অংশের পরিচালক নুরুল ইসলাম ও সেনাবাহিনী অংশের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
গত ২৯ মার্চ পূর্বাচলে আয়োজিত এক অবহিতকরণ সভায় এই খাল খনন প্রকল্পের সুফল পেতে এর সঙ্গে আরও দুটি বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেছিলেন, খনন প্রকল্পের সুফল পেতে হলে একই সঙ্গে কুড়িল রেলক্রসিংয়ের কাছে পানি নিষ্কাশনের জন্য বিদ্যমান পাইপলাইনটি প্রশস্ত করতে হবে। পাশাপাশি উড়ালসড়কের নিচে স্লুইসগেটের কঠিন বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে।
ওই সভার প্রধান অতিথি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনও মেয়রের প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। একই সঙ্গে ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্পের উপযোগিতা নিশ্চিতের জন্যই এই এলাকার বোয়ালিয়া খাল খনন এবং তা দখলমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি কে বা কারা এই দখলের সঙ্গে যুক্ত। এই দখলদারদের উচ্ছেদ করে প্রয়োজনে ব্যয় বাড়িয়ে ১০০ ফুট খাল খনন প্রকল্পের আওতায় বোয়ালিয়া খাল ড্রেজিং করতে হবে।’