ঢাকার সাভারের বাসস্ট্যান্ড এলাকার আটতলা ‘রাজ্জাক প্লাজা’ ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এই ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে—একটি বেসকারি টেলিভিশন চ্যানেলে এমন সংবাদ প্রচারের পর স্থানীয় প্রশাসন গতকাল বুধবার ভবনটি সিলগালা করে দেয়।
ওই ভবনের সাত ও আটতলায় জুবিয়ান সোয়েটার এবং চার, পাঁচ ও ছয়তলায় আল-মুসলিম নামে একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রয়েছে বিপণিবিতান। সেখানে ২৮৭টি দোকান রয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ডেপুটি সেক্রেটারি প্রকৌশলী আবদুল খালেক ভবনটি পরিদর্শন করে বলেন, ভবনটি ধসে পড়তে পারে বলে মনে হচ্ছে না। তবে আটতলার ওপরের বর্ধিত অংশের দেয়ালে কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন ও সাভার মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভবনে ফাটলসংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রচারিত হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। ভবনের প্রতিটি ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বন্ধের নোটিশ। অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয় দুটি পোশাক কারখানায়।
ভবনটি সিলগালা করা হলে দোকান মালিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দোকান খোলার দাবিতে দোকান মালিক ও শ্রমিকেরা গতকাল সকাল থেকেই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা কয়েক দফা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। সকাল নয়টার দিকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য টেলিভিশন চ্যানেলটির সাভার প্রতিনিধি সেখানে গেলে দোকান মালিক ও শ্রমিকেরা তাঁকে মারধর করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পাশেই তাঁর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেয়। দোকান মালিক-শ্রমিকেরা ওই বাড়িতেও হামলা চালান। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর পুলিশ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে বেলা একটার দিকে দোকান মালিক-শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নেন।
ভবন মালিকদের অন্যতম অংশীদার ওলি আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভবনে কোথাও ফাটল নেই। রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ নীতিমালা মেনেই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে।’
রাজ্জাক প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভবনের আটতলায় দুটি জেনারেটর ছিল। রানা প্লাজা ধসের পর জেনারেটর দুটি নামিয়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া আর কোনো ত্রুটি আমাদের নেই। মূল ভবনের কোথাও ফাটল ধরেনি। মিথ্যা সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়ায় ঈদের আগে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।’
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হাসান মোল্লা বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভবন মালিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ঝুঁকিমুক্ত ঘোষণা করলেই ভবনটি খুলে দেওয়া হবে।
ইউএনও আরও বলেন, ‘ভবনটির আটতলা পর্যন্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু ছাদে ইটের দেয়াল তুলে অবৈধভাবে ক্যানটিন করা হয়েছে। ওই ক্যানটিনের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে মূল ভবনে কোনো ফাটল আমাদের চোখে পড়েনি।’