বনানী রেলস্টেশন শুধু নামেই
রাজধানীর বনানী রেলস্টেশন শুধু নামেই। ট্রেনযাত্রীদের জন্য এতটুকু সুযোগসুবিধা সেখানে নেই। দিনে মাত্র চারটি ট্রেন থামে। কিন্তু কোনো যাত্রী উঠতে পারেন না প্ল্যাটফর্ম নেই বলে। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়, তবে সেই ট্রেনের যাত্রী ওঠেন অন্য স্টেশন থেকে। রেলে কোনো সংকেত ব্যবস্থাও নেই বনানীতে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, বনানী ‘ডি ক্লাস’ স্টেশন হিসিবে বিবেচিত। এ ধরনের স্টেশনের ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবে রেলওয়ের নজর কম।
রাজধানীর গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার মানুষের ট্রেনে যাতায়াতের জন্য বনানী স্টেশন গুরুত্বপূর্ণ স্থান হতে পারে। কিন্তু রেলওয়ের সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর পথের বলাকা, তুরাগ, ঈশা খাঁ কমিউটার এবং ঢাকা থেকে জয়দেবপুর ডেমু ট্রেন এ স্টেশনে থামে। এর মধ্যে ঈশা খাঁ নামের ট্রেনটি বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে।
গত রোববার বনানী স্টেশনে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো লোকাল ট্রেনের দেখা মেলেনি। কখন আসবে তাও কেউ জানেন না। স্টেশনের লোকজন জানান, এই স্টেশনে সংকেত ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরাও এসব ঠিকমতো বলতে পারেন না। প্ল্যাটফর্মে কয়েকজন যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। একজন যাত্রী বললেন, পারতপক্ষে তাঁরা এই স্টেশন এড়িয়ে চলেন। ওই যাত্রীর পাশে দাঁড়ানো নারী নাজমা আক্তার জানালেন, ‘গাজীপুর যাব, তাই ১১টার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করলাম। ছেলের অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাই বাসেই যেতে হবে। ছেলে না থাকলে ট্রেনে উঠতে পারব না গো মা।’ কথাগুলো বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন।
স্টেশনমাস্টার ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্টেশনের মূল সমস্যা প্ল্যাটফর্ম নেই। ট্রেনে ওঠা-নামার ভোগান্তি এড়াতে যাত্রীরা এই স্টেশন কম ব্যবহার করেন।
রফিক আহমেদ প্রায় দিনই কমলাপুর থেকে কমিউটার ট্রেনে করে জয়দেবপুরে বাড়ি যান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বনানীতে কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার সুবিধা হবে ভেবে এসে বিপদে পড়েছি। স্টেশনে ট্রেন কখন আসবে কে জানে?
আবদুল আহাদ নামের এক যাত্রী জানান, তিনি আন্তনগর ট্রেনের টিকিটের জন্য এসেছেন। তবে এই ট্রেন বনানীতে থামবে না। তিনি উঠবেন বিমানবন্দর স্টেশন থেকে। তিনি বলেন, আন্তনগর ট্রেনগুলো বনানী রেলস্টেশন থেকে যাত্রী ওঠালে গুলশান, বনানী ও মহাখালীসহ আশপাশের মানুষের অনেক উপকার হতো। আবার সব লোকাল ট্রেন যদি এই স্টেশনে থামত, তাহলে উত্তরা-জয়দেবপুর থেকে আসা লোকজন সহজে আসতে পারবেন। অনেক মানুষ গুলশান ও আশপাশের এলাকায় চাকরি করেন। তাঁরা সহজেই এই স্টেশনটি ব্যবহার করতে পারতেন। লোকজনের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয় রেলস্টেশন এলাকা।
এক যাত্রী বললেন, মূল সড়ক থেকে স্টেশনে ঢোকার মুখে রয়েছে সারি করে রাখা গাড়ি। সেই সঙ্গে রয়েছে বাস থামার জায়গা। দিনের বেশির ভাগ সময় সেখানে বাস দাপিয়ে থাকে। সব মিলিয়ে রেলস্টেশন আর সহজে চোখে পড়ে না। আরেক যাত্রী বললেন, এই স্টেশনে যাত্রীদের মালামাল নিয়ে যাতায়াত করতে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে স্টেশনের পরিবেশটা খুব নিরিবিলি। আবার স্টেশনের সামনেই আছে গোছানো বসার জায়গা। লোকজনের চলাফেরাও তেমন বেশি না। কিন্তু প্ল্যাটফর্ম না থাকার কারণে নারী ও বয়স্ক লোকজন ট্রেন থেকে নামতে পারেন না। বিশেষ করে ডেমু ট্রেনের দরজা সাধারণ দরজার চেয়ে বেশি উঁচু। প্লাটফর্ম না থাকায় ডেমুর যাত্রীরা বিমানবন্দর স্টেশনে নামেন না।
জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মকবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের সুবিধা বাড়াতে বনানী রেলস্টেশনে উন্নয়ন করা হবে। তবে এসব করতে কিছুটা সময় লাগবে।
আরও পড়ুন
-
মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই ‘অস্ত্রোপচার’ করতেন মিল্টন সমাদ্দার: ডিবি
-
দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টি: টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, অপরিবর্তিত একাদশ
-
সেই ৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ঘিরে কী ঘটেছিল
-
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা আসছেন বুধবার
-
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীরা কী চান, ফিলিস্তিনি বিডিএস আন্দোলন কী