বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নিরাপদ পরিসর

>

২২ ডিসেম্বর ২০১৫, ব্র্যাক ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নিরাপদ পরিসর’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

সূত্র: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, আইসিডিডিআরবি ও ব্র্যাক
সূত্র: প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, আইসিডিডিআরবি ও ব্র্যাক

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ বা অপরিণত বয়সে বিয়ে একটি ভয়াবহ সমস্যা। বাল্যবিবাহ জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের প্রবণতা অনেক বেশি।
স্কুল, কলেজ, বাড়ি, তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক—সব ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিসর দরকার। দেশে এ সমস্যা অনেক পুরোনো। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য আইনের কোনো অভাব নেই। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই।
আজকের আলোচনার মাধ্যমে মেয়েদের নিরাপদ পরিসরের বিষয়টি আরও সামনে আসবে। নীতিনির্ধারকসহ সমাজের সব ক্ষেত্রের মানুষকে এ বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। এখন আলোচনা করবেন সাদেকা হালিম।

সাদেকা হালিম

সাদেকা হালিম: মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব বা মেজনিন প্রকল্পে গবেষণা করছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্র্যাক মেয়েদের নিরাপদ পরিসর তৈরির জন্য কাজ করছে। মেজনিন দেশের ১৩টি জেলার ৪০৫টি স্কুলে কাজ করছে। নিম্ন, মধ্য ও উচ্চবিত্ত—সব ধরনের শিক্ষার্থী এখানে আছে। ২০১০ সালে মেজনিন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মেজনিন প্রকল্পের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত আছেন।
যৌন হয়রানি ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের যেসব প্রতিনিধি কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে ১১ থেকে ১৭ বছরের মেয়ে ও ছেলেশিশুরা যাতে যোগাযোগ করতে পারে, মেজনিন সে ব্যবস্থা করে দেয়।
মেজনিন প্রকল্পে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় অনেক সহযোগিতা করেছে। তারা স্কুলের শিক্ষকদের সাইকোসোশ্যাল প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমাদের দেশের নারী ও শিশুরা বাইরে তো দূরের কথা, বাড়িতেও কথা বলার সুযোগ পায় না। এই মেয়েরাই এখন অনেক বেশি সাহসী।
শিক্ষার্থীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফোন নম্বর, উপজেলা কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, এমনকি জেলা প্রশাসকের নম্বর পর্যন্ত আছে। যেকোনো সমস্যায় তারা এসব সরকারি কর্মকর্তার সাহায্য নিতে পারছে।
বাংলাদেশের ৯০ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবার মনে করে বাল্যবিবাহে স্বাস্থ্যসহ অনেক ধরনের ক্ষতি রয়েছে। আবার ৮৮ শতাংশ বাল্যবিবাহ দিতে চায়। এর প্রধান কারণ, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের আতঙ্ক। এই জায়গায় আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

এ কে এম নেছার উদ্দিন ভুইয়া

এ কে এম নেছার উদ্দিন ভুইয়া: বাল্যবিবাহ আমাদের দেশে অনেক পুরোনো সমস্যা। জাতিসংঘ ঘোষণামতে, ১৮ বছর বয়সের নিচে সব নাগরিক শিশু। এটি সব পর্যায়ে মানাও হচ্ছে। ১৮ বছরের আগে কেউ দলিলে স্বাক্ষর করতে পারে না। আদালতে সাক্ষ্য নেওয়া হয় না।
১০ থেকে ২০ বছর আগে যে অবস্থা ছিল, এখন তা নেই। মেয়েরা এখন সব পর্যায়ে সামনে আসছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৯ শতাংশ ছেলে ও ৫১ শতাংশ মেয়ে পড়ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ শতাংশ মেয়ে ও ৪৬ শতাংশ ছেলে পড়ছে।
একসময়ে মেয়েরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনে আসতে পারত না। বঙ্গবন্ধু বাধ্যতামূলকভাবে মেয়েদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখলেন। এখন পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সব ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিনিয়ত নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলে আজ অর্ধেকের বেশি মেয়ে। মেধায় যখন চলে আসবে, তাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ১৯৯০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নারীরা দেশ চালাচ্ছেন। এই যুগে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে কোনোভাবেই হতে পারে না।
মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ বছর বয়সই নারীর বিয়ের বয়স ঠিক আছে। বিয়ের বয়স যাতে ১৮ বছরই থাকে, এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

হাবিবুর রহমান

হাবিবুর রহমান: আজকের আলোচনায় নিরাপদ পরিসরের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ঘর, প্রতিষ্ঠান অন্যান্য সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তার বিষয় অত্যন্ত জরুরি। সবাই জানি, নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে। কিন্তু নারীকে সব সময় নিরাপত্তাজনিত একটা বাড়তি চাপ নিতে হয়।
আজ আলোচনার প্রধান বিষয় বাল্যবিবাহ। কেন আমরা বাল্যবিবাহের সঙ্গে নিরাপদ পরিসরের বিষয়টি যুক্ত করলাম? মেয়েরা কিছুটা বড় হলেই অভিভাবকেরা তঁাদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থাকেন।
ঘরে–বাইরে, কর্মক্ষেত্রে—সব জায়গায় মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৬৪ শতাংশ। এটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শুনছি, বিয়ের বয়স ১৮ থাকছে। কিন্তু দেশের মানুষ মনে করছে, বিয়ের বয়স কমে গেছে। এটা যদি আইন আকারে বের হয়, তাহলে একটা মারাত্মক অবস্থা তৈরি হবে।
স্থানীয় মানুষই যাতে তাদের এলাকার নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারে, সে রকম একটা ধারণা আমরা তৈরি করেছি। আমরা অভিভাবকসহ সবার সঙ্গে কথা বলেছি। এঁদের ৭১ শতাংশ বলেছেন, নিরাপত্তাহীনতার জন্যই বিয়ে দেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের একটা জরিপ থেকে জানা যায়, ৮৮ শতাংশ অভিভাবক বাল্যবিবাহের ক্ষতির বিষয় জানেন। কেবল নিরাপত্তাহীনতার জন্য তাঁরা বিয়ে দেন। আমাদের একটি অন্যতম সুপারিশ হলো কোনোভাবেই যেন বিয়ের বয়স ১৬ বছর করা না হয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়া, সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।

সাদিয়া আকরাম

সাদিয়া আকরাম: আমাদের প্রধান সমস্যা হলো আমরা অনেক কিছু জানি না। এই গোলটেবিলে এসে প্রথম জানলাম, মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স মাত্র ১৬ দশমিক ৪ বছর। মেয়েদের যৌন হয়রানির ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন রকম অর্থদণ্ড ও জেল-জরিমানা আছে, সেটা জানা ছিল না। মেজনিন প্রকল্পের মাধ্যমে জেনেছি। তবে এটা সত্যি যে এসব আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চালে। প্রথম দিকে মনে করতাম, ছেলেমেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবাই সমান।
আমার বয়স যখন ১৩ থেকে ১৪ বছর হলো, তখন বুঝতে পারলাম আসলেই ছেলেমেয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। আমার খুব ইচ্ছে করে খেলা দেখতে, কিন্তু পারি না। যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন রকমের নিরাপত্তার অভাব থাকে।
আমার নিজের ক্ষেত্রেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করি। আমি তথ্য জানি বলে প্রতিরোধ করতে পারি। আমি ও আমার বন্ধুরা কোনো বিপদে পড়লে ১০৯২১ নম্বরে জানিয়ে দিই।
অামাদের স্কুলের পরিবেশ খুব ভালো। এখানে কেউ কাউকে বিরক্ত করে না। শিক্ষকদের সবকিছু খুব সহজে বলতে পারি। ব্র্যাকের মেজনিন প্রোগ্রামের জন্য এটি হয়েছে। ব্র্যাকের এই কাজ সারা দেশে সম্প্রসারণ করা উচিত।

নাজমুল রেজা রাহাত

নাজমুল রেজা রাহাত: একটা বয়সে ছেলেমেয়েরা পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। মেজনিনের কর্মসূচি আমাদের মধ্যে এমন প্রভাব ফেলেছে যে এখন কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে খারাপ মন্তব্য বা উত্ত্যক্ত করে না। কেউ করতে চাইলে আমরা তাকে বোঝাই।
আগে বাথরুমে অনেক খারাপ উক্তি লেখা থাকত। এখন ভালো কথা লেখা থাকে। প্রতিটি ক্লাসে আমরা আলোচনা করি, মেয়েদের প্রতি আমাদের আচরণ কী হবে, কীভাবে একে অপরকে সম্মান করব ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা আমাদের সহযোগিতা করছেন। একবার আমাদের এক বন্ধু দেখে, কয়েকটি ছেলে একটি মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছে। তখন সে একটু দূরে থাকা পুলিশকে বলে। পরে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়।
আমি মনে করি, শুধু ব্র্যাকের মেজনিন দেশের সব মেয়েকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

জিনাত ফারহানা

জিনাত ফারহানা: আমাদের স্কুলে মেজনিনের একটি ভিডিও চিত্রে যৌন হয়রানি শব্দটা ছিল। এটা নিয়ে কমিটির একজন সদস্য তীব্র প্রতিবাদ জানান। স্কুলের দেয়াল লিখন নিয়ে সবার প্রতিবাদ ছিল। ধীরে ধীরে আমরা সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
এখন সবাই এগুলো স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। আমাদের স্কুলের একজন শিক্ষক পাঁচ দিনের সাইকোসোশ্যাল প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁর কাছে শিক্ষার্থীরা সবকিছু অকপটে বলছে। এখন অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভােলা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
এখন আমরা একটা কাজ করছি, এটা খুব কার্যকর হচ্ছে। যেমন আমরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাই যে তোমার শিক্ষা তোমাকে এত ওপরে নিয়ে যাবে, যা তুমি কল্পনাও করতে পারছ না। তাই তুমি অল্প বয়সে বিয়ে কোরো না।
অধিকাংশ মেয়ের ক্ষেত্রে এটা কার্যকর হয়। মেয়েটি এমনভাবে বেঁকে বসে যে তাকে আর বিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে মেজনিনের এ কার্যক্রমকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে বাল্যবিবাহ প্রতিেরাধে তা ভালো ভূমিকা রাখবে।

ফাহমিদা জেবিন

ফাহমিদা জেবিন: কুমিল্লায় আমি মেজনিন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হই। আমাদের জেলার ২০টি স্কুলে মেজনিন কাজ করে। আমি প্রতিটি স্কুলের মিটিংয়ে থেকেছি। মেজনিন শিক্ষার্থীদের জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছে। মেজনিনের মাধ্যমে স্কুলের মেয়েরা নিজেরাই যৌন হয়রানিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে অন্যদের জানিয়ে দেয়। তারা জানে হয়রানির বিরুদ্ধে আইনের কী কী প্রতিকার রয়েছে।
তারা অনেক সাহসী হয়ে কথা বলতে পারছে। দেশের সব স্কুলে কীভাবে মেজনিনের এই কাজ সম্প্রসারণ করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কিছুদিন অাগে আমরা একটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করি। পরে আবার চট্টগ্রামে গিয়ে ভুয়া সনদ জোগাড় করে বিয়ে হয়। বিয়েটি আবার অল্পদিনের মধ্যে ভেঙেও যায়। অাসলে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সংসার ভাঙার প্রবণতা অনেক বেশি।

ফারজানা ব্রাউনিয়া

ফারজানা ব্রাউনিয়া: আমরা যদি জেন্ডার সমতার কথা বলি, তাহলে ছেলেমেয়ের উভয়ের বিয়ের বয়স ২১ বছর হওয়া উচিত। মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদের দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। একটা বয়সে ছেলেমেয়ে উভয়েরই শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয়। এগুলোর সমাধান কী, সে বিষয়ে তাদের জন্য কোনো বিধিবদ্ধ নির্দেশনা নেই।
বাড়িতে একটা ছেলে দেখে, তার মা তার বাবার সব কাজ করে দিচ্ছেন। তারপরও কোনো ক্ষেত্রে একটু ভুল হলে মাকে বকা দিচ্ছেন, প্রহার করছেন। এসব দেখে খুব কম ছেলেই ভালো মানুষ হতে পারে।
আবার ছেলেরা মনে করে, মেয়েদের ক্ষমতায়ন হলে ছেলেরা ক্ষমতাহীন হয়ে পড়বে। তাদের বোঝানো দরকার, একজন নারী ক্ষমতাবান হচ্ছেন। তিনি কে? তিনি কারও মা, বোন, স্ত্রী ইত্যাদি। এসব মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুরুষেরও ক্ষমতায়ন হবে। ক্ষমতা কেউ একা ভোগ করতে পারে না।
ছেলেমেয়ে কারও যদি কাউকে ভালো লাগে, সে ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বলতে পারে, তোমাকে আমার ভালো লাগে, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। কিন্তু কোনো আপত্তিকর মন্তব্য তার রুচি ও ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমাদের ছেলেদের এটা বোঝাতে হবে।
পঞ্চগড়ের এক কিশোরী মেয়ে সবার সহযোগিতায় বাল্যবিবাহ প্রতিহত করে। পরে সে স্বর্ণকিশোরীর সঙ্গে যুক্ত হয়। তার বাবা স্বর্ণকিশোরী অনুষ্ঠানে এসে বলে, এ অশ্রু আমার বেদনার নয়, আনন্দের।

আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান

আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান: বিয়েগুলো সাধারণত শুক্রবার ও শনিবারে হয়। এ সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি ছাড়া আর তেমন কোনো কর্মকর্তা থাকেন না। দুজন মানুষের পক্ষে একটি বিয়ে বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
কোনো একটি বিয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সবাই বিয়ের পক্ষে, শুধু এই দুজনই বিপক্ষে। শুক্র ও শনিবার এত ফোন পাই যে আমার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকে না। তারপরও সবাইকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
এমনও ঘটনা ঘটে, একটি বিয়ে বন্ধ করে এলাম, একজন রাতে ফোন করল, স্যার, আপনি বিয়ে বন্ধ করলে কী হবে, অন্য জায়গায় নিয়ে মেয়েকে বিয়ে দেবে। আসলে এ ক্ষেত্রে দেশের পরিবারগুলোকে, বিশেষ করে মা-বাবাকে বুঝতে হবে, বাল্যবিবাহ দেওয়া মানে তাঁরা সন্তানের সর্বনাশ করতে যাচ্ছেন। এই বোধ যত দিন না আসবে, তত দিন পুরোপুরি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
আমরা একটি বিয়ে বন্ধ করেছি, যেখানে ছেলে ও মেয়ের বয়সের পার্থক্য ২৩ বছর। বিয়ে বন্ধ করায় মেয়ের মা আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে লগ্ন একটি বিষয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে রাত দুইটা বা তিনটায় শুরু হয়। ওই সময় পর্যাপ্ত ফোর্স ও অন্যান্য সংকটের জন্য বিয়ে বন্ধ করতে পারি না।
গ্রামের অধিকাংশ বিয়ে হয় ভুয়া কাজিদের মাধ্যমে। ফলে এই নারীরা বিপদের সময়ে খুব একটা সহযোগিতা পান না। সম্পূর্ণ উপায়হীন মেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য আমরা একটি তহবিলের ব্যবস্থা করেছি।
জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা হতাশাজনক। একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে বলেছি। জন্মসনদের কোনো অ্যাফিডেভিট হতে পারে না। আমাদের অনেক আইনজীবী এটা করে থাকেন। সবাই সচেতন না হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

সাবিনা সুলতানা

সাবিনা সুলতানা: মেজনিনের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। আমাদের একটি জাতীয় ট্রমা সেন্টার আছে। এখানে মনঃসামাজিক, সাপোর্টিভ—এ ধরনের কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। এখান থেকে আমরা মেজনিনের শিক্ষকদের পাঁচ দিনের একটি মনঃসামাজিক কাউন্সেলিংয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমাদের একটি জাতীয় হট লাইন নম্বর ১০৯২১ আছে। যেকোনো নারী বিপদে পড়লে এই নম্বরে ফোন করবেন। তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তঁাকে সহযোগিতা করবে।
১০৯২১ নম্বরের ভয়েস রেকর্ড করা হয়। তাই কেউ যদি সহায়তা না করেন, তিনি কিন্তু জবাবদিহির আওতায় আসবেন। এটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের একটি কোর প্রোগ্রাম। ২০১২ সালের ১৯ জুন এই কর্মসূচি চালু হয়। বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তখন আমাদের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি এটি উদ্বোধন করেন। ডেনমার্কের সহায়তায় এটি করা হয়েছে।
আমাদের একটি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার আছে। একজন নির্যাতিত নারী এক জায়গা থেকে যেন সব ধরনের সেবা পান, তার জন্য এ ব্যবস্থা। ফরেনসিক প্রতিবেদন নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এ জন্য আমাদের এ প্রকল্পের আওতায় একটি ডিএনএ ল্যাবরেটরি আছে।
আমরা ধাপে ধাপে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে অনেক কিছু করেছি। এখন সবাই সচেতন হলে বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

তানিয়া নুসরাত জামান

তানিয়া নুসরাত জামান: বাল্যবিবাহকে আমরা শিশু অধিকারের লঙ্ঘন মনে করি। নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয় বাল্যবিবাহের মাধ্যমে।
আজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুরাও বলল তাদের নিরাপদ পরিসরের অভাবের কথা। আমাদের দায়িত্ব নিরাপদ পরিসরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। মেয়েশিশুরাই ঠিক করবে, তাদের জন্য কোনটি নিরাপদ পরিসর।
অনেক মেয়েই বলে যে তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে যেতে পারে না। কারণ সেখানে গেলেই সন্দেহ করে। সব শ্রেণির মেয়েশিশুকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন। মেয়েদের কারাতেসহ বিভিন্ন ধরনের আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
বাল্যবিবাহ আমরা চূড়ান্তভাবে প্রতিরোধ করতে পারছি না। কোনো এক জায়গায় প্রতিরোধ করলে অন্য জায়গায় গিয়ে বিয়েটা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে পরিবারগুলোকে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বোঝানো প্রয়োজন।
বাল্যবিবাহ মানে একজন শিশুকে শিশুর মায়ের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। একজন শিশুর বিয়ের ফলে তার ওপর যে দায়িত্ব পড়ছে, তার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত না। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবারগুলোয় বাল্যবিবাহের কুফলের উপলব্ধিটা ভালোভাবে আসবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
আমরা অনেকে অনেকভাবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছি। আমাদের সবার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

সারা হোসেন

সারা হোসেন: ঢাকার তিনটি বড় বস্তি এলাকা—মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী এবং আরও ১৫টি বস্তিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছি। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আইনি সেবার জন্য গেলে মেয়েদের অনেক সময় ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয় না।
আমরা কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজটি করছি। এর নাম দিয়েছি সখীকেন্দ্র। স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি এখানে মেয়েরা আইনি সেবা নিতে পারেন।
মেয়ে ও নারীরা বাল্যবিবাহ, নির্যাতন, যৌন হয়রানি ইত্যাদি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এঁদের মাত্র ২ শতাংশ শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত যেতে চান। সখীকেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি আইনি প্রতিকার চাওয়া নারীর সংখ্যা যাতে বাড়ে।
আমাদের একটা স্লোগান আছে, ‘আমার শৈশব আমার স্বাধীনতা’। শৈশব থেকেই মেয়েরা যদি খেলাধুলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে বিয়ে বিলম্বিত হবে। আমাদের ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা মেয়েরা সমাজের আদর্শ হতে পারে। তারা একটা লড়াইয়ের মাধ্যমে নিজেদের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে পেরেছে। আবার জীবনে সফলতা এনেছে। এরা হচ্ছে সমাজের ‘রোল মডেল’।
একজন মেয়ে বা নারী তার একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্তগুলো, যেমন তার শারীরিক ও মানসিক সিদ্ধান্তগুলো সে নেবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অধিকারও তার থাকবে।
‘বিয়ে দেওয়া’ শব্দের পরিবর্তে মেয়েরা যেন ‘বিয়ে করা’ শব্দ ব্যবহার করে। মা-বাবা ছেলে দেখবেন। কিন্তু সেই ছেলেকে বিয়ে করেব কি করেব না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মেয়েদের থাকতে হবে। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা আছে, এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন দরকার।
বাংলাদেশের একজন মেয়ে কখন বিয়ে করবেন, কাকে বিয়ে করবেন এবং আদৌ বিয়ে করবেন কি না, এ সিদ্ধান্ত তঁার মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একজন নারীর এ অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবে। আমরা কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশারের মতো মানুষ সমাজে চাই, যাঁরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছেন।

ফারাহ্ কবির

ফারাহ্ কবির: আমাদের শিশু বিকাশকেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্রের শিশুরা কমিটি করে অনেক বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে।
আমি খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করি। এসব জায়গার মা-বাবার সন্তানসংখ্যা অনেক বেশি। এখানকার পুরুষেরা নারীদের প্রতি যে আচরণ করে, সেটা দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে মেলানো যাবে না।
আমাদের দেশের অভিভাবকদের উচিত নিজেদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার মানসিকতা তৈরি করা।
নিরাপত্তা বলতে কেবল যৌন সহিংসতার নিরাপত্তা না। একজন মেেয়র শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন—সবকিছুর নিরাপত্তার বিষয়টি আসতে হবে। অভিভাবকেরা জানেন, বিয়ের ছয় মাস, এক বছরের মাথায় আবার মেয়েটি তঁার সংসারে হয়তো ফিরে আসবে। তাঁদের ধারণা, তখন সে অন্য একজনের বউ।
জনপ্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে বললে তাঁরা বলেন, আপা, বিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় কী? বিয়ে দিলে পরিবারটা রক্ষা পায়। আমাদের শিশুদের কোনো স্বপ্ন দেখানো হয় না, তাদের কোনো রোল মডেল নেই। তাদের কারও ক্যারিয়ার প্ল্যান নেই। এসব বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
লালমনিরহাট উপজেলা বাল্যবিবাহমুক্ত হয়েছে। কারণ, ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সব ধরনের প্রোগ্রাম শেষে একটা কথা বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধ করো। বাল্যবিবাহের ক্ষতির দিকটা তো বলেনই।
এমন কিছু মানুষের দরকার, যাঁরা আন্তরিকতা দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোক, ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার হোক, যিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভালো কাজ করবেন, তাঁকে সরকার থেকে পুরস্কৃত করা প্রয়োজন।

রাশেদা কে চৌধূরী

রাশেদা কে চৌধূরী: ৮৮ শতাংশ অভিভাবক জানেন, বাল্যবিবাহ ক্ষতি, তবু তাঁরা বিয়ে দিচ্ছেন। এই জায়গায় আমাদের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আমরা সবাই জানি, মেয়েদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে এখন আমাদের মেেয়রা দেশের ক্রীড়াঙ্গনকেও আলোকিত করছে। সম্প্রতি নেপালে মেয়েরা ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এত কিছুর পর কেন মেয়েদের বাল্যবিবাহ? মা–বাবার কথায় বিয়ে নয়, বিয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার মেয়েদের। মেয়েদের কেউ ‘বিয়ে দেবে’ নয়, মেয়েরা ‘বিয়ে করবে’।
আমাদের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ প্রথম জেনারেশনের। তাদের মা-বাবা লেখাপড়া জানেন না। এ ক্ষেত্রে কে দায়িত্ব পালন করবে। সামাজিক সংগঠনগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।
কিছু বিদেশি বাজে সংস্কৃতি আমাদের ভিন্নভাবে ক্ষতি করছে। এখানে শুধু আমাদের সদিচ্ছা থাকলে হবে না, রাষ্ট্রের ভূমিকা নিতে হবে।
নারীর যথাযথ স্বীকৃতিদানই হচ্ছে সিডও সনদের মূলকথা। এবার মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় সিডও প্রতিবেদনে বলেছে, সমাজ এখনো তৈরি হয়নি।
৪৪ বছরেও যদি সমাজ তৈরি না হয়, তাহলে কিসের নারীর উন্নয়ন আর ক্ষমতায়ন হলো? আমাদের অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাফল্য আছে। রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় এগুলোকে বিস্তৃত করতে হবে।

এ কে এম নেছার উদ্দিন ভুইয়া: আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়েনি। আমাদের ছোটবেলা সাংস্কৃতিক রাজধানী ছিল কলকাতা। এখনো এ দেশের পরিবারগুলো সময় নষ্ট করছে বিদেশি চ্যানেল দেখে। এখানে কী আছে, শাশুড়ির পিছে বউ, বউয়ের পিছে ননদ, পরকীয়া, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি। এগুলোই মানুষ দেখছে, এটাই আমাদের দুঃখ।
সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে। শান্তিরক্ষা মিশনেও নারী আছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে অনেক সময় হাসিঠাট্টা করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো চাকরি, স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলসহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না।
যে দেশের একজন মেয়ে পৃথিবীর সব উঁচু পাহাড়ে ওঠেন, সে দেশেরই একজন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন—এটাই হচ্ছে আমাদের দুঃখ।
আমাদের ১৪ লাখ চাকরিজীবীর মধ্যে তিন লাখ নারী। এসব অর্জন এক দিনে হয়নি। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন নারী-পুরুষ সমান সমান ভোটে পাস করে সংসদে আসবেন।
সংশ্লিষ্ট সবার দিক থেকে সচেতনতার কাজটি আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমাদের অনেক অর্জন ঘরে তুলতে পারব না।

আব্দুল কাইয়ুম: মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যৌন হয়রানি—এসব বিষয়ে নিরাপত্তা থাকলে বাল্যবিবাহ অনেক কমে আসবে। আইনের সঠিক প্রয়োগ নিয়ে প্রায় সব সময় কথা হচ্ছে। এখন আইনের সঠিক প্রয়োগ হওয়া জরুরি।
সব মহল থেকে ও আজকের আলোচনার সব বক্তা একটা জায়গায় একমত যে বিয়ের বয়স যেন কোনোভাবেই ১৮ বছরের নিচে না হয়।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আলোচনায় সুপারিশ
*যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা আইনে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি
*হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ কমিটি গঠন ও তা কার্যকর করা দরকার
*প্রতি স্কুলে একজন মনঃসামাজিক কাউন্সেলর নিয়োগ দিতে হবে
*মেয়েদের শিক্ষায় বেশি িবনিয়োগ ও জীবনদক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন
*বাল্যবিবাহ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
*বাল্যবিবাহের ফলে ছেলেমেয়ে উভয়েরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়
*বাল্যবিবাহের ফলে শিশু, নারী, সমাজ প্রত্যেকে ক্ষতির শিকার হয়

যাঁরা অংশ নিলেন
রাশেদা কে চৌধূরী : নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান
এ কে এম নেছার উদ্দিন ভুইয়া : অতিরিক্ত সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
ফারাহ্ কবির : কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ
সাদেকা হালিম : অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কেরানীগঞ্জ
সাবিনা সুলতানা : সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্প
সারা হোসেন : অনারারি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ব্লাস্ট
হাবিবুর রহমান : কর্মসূচি প্রধান, জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি, ব্র্যাক
ফারজানা ব্রাউনিয়া : চেয়ারম্যান ও সিইও, স্বর্ণকিশোরী নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন
তানিয়া নুসরাত জামান : ডেপুটি চিফ অব পার্টি, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ
ফাহমিদা জেবিন : আহ্বায়ক, জেলা যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্ক, কুমিল্লা
জিনাত ফারহানা : কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল হাইস্কুল
সাদিয়া আকরাম : সদস্য, স্টুডেন্ট ওয়াচ গ্রুপ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আদর্শ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ
নাজমুল রেজা রাহাত : আহ্বায়ক, স্টুডেন্ট ওয়াচ গ্রুপ, শেরেবাংলা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো