বায়তুল মোকাররমে হাজারো মুসল্লির একসঙ্গে ইফতার

প্রতি রোজায় ইফতারকে ঘিরে অন্য রকম এক আবহের সৃষ্টি হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। ধনী-গরিব, ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী—হাজার হাজার রোজাদার মুসল্লি এক কাতারে বসে ইফতার করেন মসজিদে।
এখানে সরকারিভাবে ইফতারের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, গত দুই দিনে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি মসজিদে বসে ইফতার করেছেন। আগের বছরের তুলনায় এখানে ইফতার করতে আসা রোজাদারের সংখ্যা বেড়েছে। ইফতারির জন্য এ বছর বরাদ্দ এক লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে রোজাদারের সংখ্যা অনুপাতে এ বরাদ্দে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
গত আট-নয় বছর ধরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের মুসল্লিদের ইফতারির আয়োজন করে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এর জন্য রোজার আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ বছর ইফতারির জন্য ফাউন্ডেশনের বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১০ লাখ টাকা। গত বছর ছিল সাড়ে নয় লাখ টাকা। এ বছর সাত লাখ ২১ হাজার টাকায় কাজ পেয়েছে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতিদিন ৪৫ কেজি মুড়ি, ৫০ কেজি ছোলা, ৬০ কেজি পেঁয়াজু, ৬০ কেজি খেজুর, ৫০ কেজি জিলাপি, ২০ কেজি চিনি, ১০ বোতল রুহ আফজা, এক হাজার ২০০ কলা সরবরাহ করা হয়। কর্তৃপক্ষ শরবত বানিয়ে গ্লাসে সরবরাহ করে। এ ছাড়া আরও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যার যার মতো ইফতারের আয়োজন করে এখানে।
গতকাল ইফতারির সময় বায়তুল মোকারর মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের পূর্ব শাহানে (পূর্ব অংশে) হাজারো মুসল্লি সারি বেঁধে ইফতারের জন্য বসেছেন। এক পাশ থেকে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা ইফতারি বিলি-বণ্টন করছেন। পাশের অস্থায়ী মঞ্চে চলছে ইফতারি-পূর্ব কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত পাঠ।
অবশ্য আসরের নামাজের পর থেকেই এখানে শুরু হয় খণ্ড খণ্ড ইফতারির আয়োজন। মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব—তিন প্রান্তেই মাগরিবের নামাজের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে এ প্রস্তুতি। মসজিদের পূর্ব শাহানের দক্ষিণ পাশে প্রতিদিন ৩০০ মুসল্লির জন্য ইফতারির আয়োজন করে তাবলিগ জামাতের বায়তুল মোকাররম মসজিদ শাখা। তারাও ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনির সঙ্গে কলা, জিলাপি মিশিয়ে ইফতারি করান।
তাবলিগ জামাতের কর্মী আবদুল ওয়াহাব বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ শাখায় তাবলিগের ৪০ জন সাথী ভাই আছেন। তাঁরা প্রতিদিন চাঁদা তুলে এই ইফতারের আয়োজন করেন।
এ ছাড়া মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে সাধারণ মুসল্লিদের জন্য আলাদা ইফতারির আয়োজন করে বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিদিন ইফতার সামগ্রী পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক (মসজিদ ও মার্কেট) মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে আমরা বৃহৎ পরিসরে ইফতারির আয়োজন করছি। তাতে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মুসল্লির ইফতারির সংকুলান হয়। কিন্তু এ বছর প্রথম দুদিনে প্রায় তিন হাজার করে মুসল্লি হয়েছেন।’