বিগ-বি কী?

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে জাপান সরকারের প্রস্তাবিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি) ইনিশিয়েটিভ বিগ-বি নামে পরিচিত। ইতিমধ্যে এই উদ্যোগের আওতায় অনুমোদিত হয়েছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিগ-বির প্রধান তিনটি স্তম্ভের একটি এটি।
গত ১২ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা এলাকায় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার দুটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এতে ২৯ হাজার কোটি টাকাই দিচ্ছে জাপান।
মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার (বেল্টে) এলাকায় শিল্পায়নকে সামনে রেখে এই বিগ-বি উদ্যোগটির পরিকল্পনা করা হয়। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেশের এই অঞ্চল বেশ সম্ভাবনাময় বলে মনে করে জাপান। গত মে মাসে টোকিওতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বিগ-বি ধারণাটি তুলে ধরেন। গত জুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ধারণাটির ব্যাখ্যা দেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রেসিডেন্ট আকিহিকো তানাকা।
জাইকার প্রেসিডেন্ট জানান, তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েছে এই বিগ-বি ধারণাটি। প্রথমটি হলো শিল্প ও বাণিজ্য। বহুদিন ধরেই আকাঙ্ক্ষিত একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকে কেন্দ্র করে এই স্তম্ভটি। এই বন্দর বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে এশিয়ার অন্যান্য অংশের মধ্যে বাণিজ্যিক সদর দরজা হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় স্তম্ভটি হলো জ্বালানি, যা মাতারবাড়ী প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে শুধু বিগ-বি আওতাভুক্ত এলাকাই নয়, পুরো বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে আকষ্মিক গতি সঞ্চার করা যাবে। চলতি অর্থবছরে শুরু হয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে।
তৃতীয় স্তম্ভ পরিবহনব্যবস্থা। দেশের বৃহত্তর শিল্প, বাণিজ্য ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পরিবহনব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা উচিত। এমনকি তা প্রতিবেশী দেশগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিগ-বি ধারণাটি বাংলাদেশে নতুন হলেও থাইল্যান্ড ও জাপানে এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়েছে। বিগ-বির আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যকার সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হলে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের মতো বাড়তে পারে।