২৩ বছর বয়সী জাসপার দেশে ও বিদেশে মিক্সড মার্শাল আর্টের সাতটি আসরের শিরোপা জয় করে তাক লাগিয়েছেন।
বক্সিং, কারাতে আর জুডোর সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা মিক্সড মার্শাল আর্টের রিং যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্য কঠিন একটা ক্ষেত্র। এই খেলায় ক্ষিপ্রতা, শারীরিক সক্ষমতা আর কৌশলের সমন্বয় ঘটাতে হয় খেলোয়াড়কে। মুহূর্তের অসতর্কতায় প্রতিপক্ষের হাতে ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে জাসপার লালখুমসাং বম কঠিন এই লড়াইয়ের ময়দানে পা রেখেই নিজেকে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরেছেন। বান্দরবানের কেওক্রাডং পাহাড়ে বাড়ি তাঁর। আর সুউচ্চ সেই পাহাড়ের মতো তাঁর স্বপ্নও অনেক বড়। মিক্সড মার্শাল আর্টের লড়াইয়ে বিশ্বসেরা হতে চান তিনি।
অবাস্তব মনে হলেও জাসপার ধীরে ধীরে সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার আমি৴ ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্টের এই ছাত্র ইতিমধ্যে দেশে ও দেশের বাইরে পাঁচটি অপেশাদার ও দুটি পেশাদার লড়াইয়ের শিরোপা জিতেছেন। উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য জেলা পরিষদের খরচে জাসপার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন আগামী মঙ্গলবার। প্রশিক্ষণ শেষ করে আগামী সাফ গেমসেও তিনি অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
মিক্সড মার্শাল আর্ট লড়াইয়ের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরের নাম আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ বা ইউএফসি। ক্রিকেটের আইপিএলের মতোই এটি একটি পেশাদারি লড়াইয়ের আসর। এখন পর্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এই আসরে বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় অংশ নিতে পারেননি।
জাসপারের লক্ষ্য, সেই আসরে প্রতিযোগী হিসেবে নাম লেখানো। তবে কেবল নাম লেখানোই নয়, তিনি এই আসরে খেতাবও জিততে চান। বিশ্বসেরা হয়ে দেশের পতাকা তুলে ধরতে চান বিশ্বমঞ্চে। সেই স্বপ্ন পূরণের সিঁড়ি হিসেবে তিনি থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রশিক্ষণ নিতে।
বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা খ্যাতনামা কারাতে খেলোয়াড়। এ ছাড়া বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও তিনি। সে কারণে মিক্সড মার্শাল আর্টের সাতটি আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া জাসপার লালখুমসাং বমের পাশে দাঁড়াতে দেরি করেনি জেলা পরিষদ।
থাইল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিতে জাসপারকে দুই লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০ এপ্রিল সংবর্ধনাও দেওয়া হয় তাঁকে।
জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা বলেন, আইপিএলের মতো মিক্সড মার্শল আর্টের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসরের আয়োজন করে ইউএফসি। বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ ইউএফসির ম্যাচে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি।
সেই ম্যাচে অংশগ্রহণই জাসপার লালখুমসাং বমের লক্ষ্য। তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য জেলা পরিষদ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
২৩ বছর বয়সী ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা ছিপছিপে শরীরের জাসপারের বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। রুমা উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রুমানাপাড়ায় তাঁদের বাড়ি।
তবে বাবা ভানরিময় বমের চাকরির সুবাদে বগুড়া, রাজেন্দ্রপুর ও ঢাকা সেনানিবাসেই তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে। স্কুল–কলেজে খেলাধুলা ও শারীরিক কসরতের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আইবিএর ছাত্র মেধাবী জাসপার মার্শাল আর্টের জগতে পা রাখেন তায়কোয়ান্দোর মধ্য দিয়ে।
২০১৭ ও ২০১৮ সালে দেশে এমএমএর অপেশাদার পাঁচটি আসরে খেলে সেরা হয়েছেন। এ ছাড়া ২০১৯ ও ২০২০ সালে ভারতে পেশাদার দুটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। প্রতিটি খেলায় প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
জাসপার বলেন, ‘আমার এখন লক্ষ্য,এমএমএর বৈশ্বিক আসর আলটিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপে (ইউএফসি) অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এ জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে থাইল্যান্ড যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ মিক্সড মার্শাল আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমএ) সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ বলেন, ‘জাসপার আমার ছাত্র ছিলেন। তিনি ভারতে দুটি পেশাদার খেলায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর উচ্চতা ও ওজন এমএমএর জন্য খুবই অনুকূল।’