ওয়েবিনার

বিশ্বে শান্তির স্বার্থে উচ্চকণ্ঠ হতে হবে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও প্রথম আলোর যৌথ আয়োজনে দুই নোবেল বিজয়ী।

জোডি উইলিয়ামস ও রিচার্ড রবার্টস
জোডি উইলিয়ামস ও রিচার্ড রবার্টস

যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে প্রত্যেকের ভূমিকা আছে, তা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবারও সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবার উচ্চকণ্ঠ হওয়া জরুরি। ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধের জন্য মার্কিন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছিল আন্দোলনের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা যে কতটা বড়, সেটি ওই আন্দোলন প্রমাণ করেছিল।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে দুই নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জোডি উইলিয়ামস ও রিচার্ড রবার্টস এ মন্তব্য করেন। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কতটা অনিবার্য ছিল, সেই আলোচনাও উঠে এসেছে ওয়েবিনারে।

‘ইজ ওয়ার ইনএভিটেবল? ক্যান উই শিফট দ্য প্যারাডাইম?’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার যৌথভাবে আয়োজন করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) ও প্রথম আলো।

মার্কিন রাজনৈতিক অধিকারকর্মী জোডি উইলিয়ামস বিশ্বজুড়ে স্থলমাইন নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রচারণায় অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য সবাইকে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। এটাই যেন শেষ যুদ্ধ হয়, সে জন্য সবাইকে উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। কারণ, মানবতার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব গুটি কয়েক মানুষের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকাটা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে জোডি উইলিয়ামস বলেন, পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখাটা জরুরি। লোকজন আন্দোলনে যুক্ত হতে সংকোচ বোধ করে, দ্বিধায় থাকে। তাই যুদ্ধের অনিবার্যতা এড়াতে হলে নিজেদের বিশ্বাস পাল্টাতে হবে। সাহস করে আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে।

ডিএনএ ও জিন গবেষণায় ভূমিকার জন্য ১৯৯৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান ব্রিটিশ নাগরিক রিচার্ড রবার্টস। এখন তিনি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের সংগঠিত করছেন। রিচার্ড রবার্টস বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বন্ধের জন্য সারা বিশ্বের মানুষকে উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এ নিয়ে জনমত থাকলেও যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে। এসব বুঝেই পুতিন এখন তাঁর মতো করে এগিয়ে যাচ্ছেন। কারণ, পশ্চিমারা এতটাই দুর্বল যে তারা তাঁকে পাল্টা জবাব দিতে পারছে না।

জোডি উইলিয়ামসের সঙ্গে একমত পোষণ করে রিচার্ড রবার্টস বলেন, তিনিও যুদ্ধকে অনিবার্য মনে করেন না। তবে যুদ্ধ বন্ধে আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন শিক্ষার্থীরা পথে নেমে বলেছিল, অনেক হয়েছে, এবার যুদ্ধ থামাও। সেটি ছিল আন্দোলনের দারুণ দৃষ্টান্ত। তরুণেরা পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের হাতেই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জাতিসংঘের ভূমিকার সমালোচনা করে রিচার্ড রবার্টস বলেন, এ যুদ্ধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা আবারও প্রমাণিত হলো। চীন ও রাশিয়ার যখন নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা থাকে, তখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ফলে জাতিসংঘ বিশ্বশান্তিতে আর কোনোভাবেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। জাতিসংঘের পরিবর্তে অন্য একটি সংস্থা গড়ে তোলার সময় এসেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পশ্চিমের দেশগুলোর ভূমিকার কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলো। ১৪ মাস আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ভূমিকার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

দেশে-বিদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভবিষ্যতেও এ ধরনের আলোচনার আয়োজন অব্যাহত থাকবে বলে জানান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাকিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, জাতিসংঘ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ায় এটির সংস্কার জরুরি। এটি না হলে জাতিসংঘকে বিলোপ করে দেওয়া উচিত।

সমাপনী বক্তৃতায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, এ উদ্যোগে সহ-আয়োজক হতে পারাটা আনন্দের। বিশেষ করে দুই নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর বক্তব্য বেশ উদ্দীপনামূলক। তাঁরা পৃথিবীটাকে ভালোভাবে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের ভূমিকার গুরুত্বের কথা বলেছেন। পাশাপাশি তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে তরুণদের বিশেষ ভূমিকার গুরুত্বটি সামনে এনেছেন।