Thank you for trying Sticky AMP!!

মর্গের ডিপ ফ্রিজে আর কত দিন?

প্রতীকী ছবি

মৃত্যুর পর পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলছে। এই পাঁচ বছর ধরেই খোকন ওরফে খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরী ওরফে খোকা চৌধুরী ওরফে রাজীব চৌধুরীর লাশ মর্গের ডিপ ফ্রিজেই রয়েছে। দুই ধর্মের দুই স্ত্রী স্বামীর লাশের দাবিদার। আদালত এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেননি—খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরী কোন ধর্মের ছিলেন।

আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেকোনো এক স্ত্রীর কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হবে। এরপরই ধর্মীয়ভাবে লাশের সৎকার বা কবর দেওয়া হবে।

২০১৪ সালের ১৫ জুন প্রায় ৭০ বছর বয়সী খোকনকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ২৬ জুন তিনি মারা যান। তাঁর লাশ প্রথমে বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বারডেম কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায় আদালতে। বছরটির ২৩ অক্টোবর সহকারী জজ আদালত (দেওয়ানি ২৫২/১৪ ঢাকা) এক আদেশে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ও তদারকিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মরচুয়ারিতে লাশটি সংরক্ষণের আদেশ দেন। ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ লাশটি গ্রহণ করে। এখন পর্যন্ত লাশটি সেখানেই আছে।

জানা গেছে, খোকনের প্রথম স্ত্রীর নাম মীরা নন্দী ও ছেলে বাবলু নন্দী। ১৯৮০ সালে ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু থেকে মুসলিম হন তিনি। ১৯৮৪ সালে খোকন হাবিবা আকতার খানমকে বিয়ে করেন।

গত মঙ্গলবার কথা হলো হাবিবা আকতার খানমের সঙ্গে। তিনি বললেন,‘বুধবার (২৬ জুন) আমার স্বামীর মৃত্যুবার্ষিকী। পাঁচ বছর হতে যাচ্ছে স্বামীর লাশ ফ্রিজে পড়ে রয়েছে। আদালত এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারলেন না—লাশ কে পাবেন। ওই পক্ষ আদালতের কাছ থেকে বারবার সময় চেয়ে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। প্রায় ছয় মাস আগে মর্গে গিয়ে লাশ দেখে এসেছি, লাশ গলে যাচ্ছে। ওই পক্ষ কিন্তু এখন পর্যন্ত লাশ দেখতেও যায়নি। তারা চাইছে, সময় নষ্ট করতে করতে আমি মারা গেলে সম্পত্তি ভোগ দখল করবে। আমার কোনো সন্তান নেই, ফলে তাদের আর কোনো সমস্যাই হবে না। আমাদের যে ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে হয়েছিল, সে–সংক্রান্ত নথিসহ বিভিন্ন সাক্ষী আদালতের কাছে হাজির করেছি।’

রাজধানীর একটি কলেজ থেকে অবসর নেওয়া শিক্ষক হাবিবা আকতার অভিযোগ করেন, ‘স্বামী বিভিন্ন সময় বলেছেন, তাঁর একটি মেয়ে আছে। কখনো ছেলে আছে বলেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর এখন ছেলেও হাজির হয়েছেন। ফার্মগেটের ক্যাপিটাল সুপার মার্কেটসহ স্বামীর অনেক সম্পত্তি ছিল, তবে আসলেই সে সম্পত্তির পরিমাণ কত, তা জানি না। স্বামী নিজে থেকেও কিছু বলেননি বা আমার নামে কিছু দিয়ে যাননি। তবে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী তাঁর আগের পক্ষের স্ত্রী বা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। হাসপাতালে মারা যাওয়ার আগে স্বামীর এক ভাই ওই পক্ষকে খবর দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বারডেম হাসপাতালে লাশ নিয়ে টানাটানি শুরু হলে রমনা থানা থেকে পুলিশ আসে। তারপর তো এত ঘটনা।’

খোকন ওরফে খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরীর ছেলে বাবলু নন্দীকে ফোন করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর জানান, তিনি একটি অনুষ্ঠানে আছেন। এক ঘণ্টা পর কথা বলতে পারবেন। এক ঘণ্টা পর ফোন দিলে তাঁর স্ত্রী পরিচয়ে একজন ফোন ধরে জানান, বাবলু নন্দী ফোন বাসায় রেখে বাইরে গেছেন।’

বারডেম হাসপাতালে খোকনের লাশ হিমঘরে রাখা বাবদ বিল হয়েছিল ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আদালতের আদেশে যে স্ত্রী স্বামীর লাশ পাবেন, তাঁকেই এ বিল পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে হাবিবা বললেন, ‘লাশ পেলে এত টাকা আমি কোথা থেকে পরিশোধ করব, তাও এক বিরাট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ক্ষমতার দাপটে স্বামীর ভাই, আগের পক্ষের স্ত্রী ও অন্যরাই তাঁর সম্পত্তি ভোগ দখল করছেন।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বললেন, ‘আইনি জটিলতা নিরসন না হলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা লাশ সংরক্ষণ করছি। তবে দীর্ঘদিন লাশ থাকলে তা কমবেশি নষ্ট হয়। আর এই লাশের জন্য আমাদের দৈনন্দিন কাজেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আদালত যে আদেশ দেবেন, আমরা তা–ই পালন করব।’