
মার্কিন সিনেটের নতুন প্রস্তাবিত একটি বিলে বাংলাদেশের শ্রম অধিকারের প্রসঙ্গটি এসেছে। জুনের দ্বিতীয়ার্ধে প্রস্তাবিত ওই বিলে রানা প্লাজা ধসের সাত বছর পর তৈরি পোশাক কারখানার কাঠামোগত নিরাপত্তায় উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগের প্রসঙ্গ এসেছে প্রস্তাবিত ওই বিলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন সিনেটের ওই বিলে শ্রমিকের সংগঠিত হওয়া এবং সুরক্ষার বিষয়ে আইএলও সনদ লঙ্ঘনের জন্য জো বাইডেন প্রশাসনকে একটি তদন্ত কমিশন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সিনেটের ওয়েবসাইট থেকে ‘গ্লোবাল লেবার সাপোর্ট অ্যাক্ট অব ২০২১’ শিরোনামের প্রস্তাবিত বিল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল রোববার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারও প্রস্তাবিত বিলের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছে।
মার্কিন সিনেটের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর বব মেনেনডেজ এটি উত্থাপন করেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মাথায় বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার জন্য সিনেটে নতুন বিল প্রস্তাবের বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, গণতন্ত্র, সুশাসন, শ্রমিক অধিকারসহ মানবাধিকারের বিষয়গুলো ডেমোক্র্যাটদের মূলনীতি হিসেবে বিবেচিত। সেই প্রেক্ষাপট থেকে দেখলে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের মূল্যবোধের জায়গাগুলোতে অতীতের মতোই জোর দেবে।
প্রস্তাবিত ওই বিলে দুটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকস্বার্থ সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের কী করা উচিত, সেটির উল্লেখ আছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে এসেছে বাংলাদেশের শ্রমিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গটি।
সিনেটের নতুন প্রস্তাবিত বিলটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সরকারে গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা, নারী ও কিশোরী কর্মীদের নিপীড়ন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে আইএলও সনদ লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়েছে। ন্যূনতম মজুরির দাবিতে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আন্দোলনে শ্রমিকদের নিপীড়ন ও হামলার প্রসঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশে আইনবহির্ভূত শ্রমচর্চার বিষয়গুলোও এসেছে।
সামগ্রিকভাবে এ বিষয়গুলো তুলে ধরে মার্কিন সিনেটের নতুন ওই প্রস্তাবে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘনের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রকে আইএলওর তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
সিনেটের প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলা হয়েছে, শ্রমিকস্বার্থ ও শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার অতীতে কিছু অঙ্গীকার করেছিল। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকারের আলোকে বাংলাদেশ সে অঙ্গীকারগুলো কতটা পূরণ করেছে, তা হালনাগাদ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করা উচিত।
২০২২ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রম অধিকার বিকাশের জন্য ন্যূনতম ৩০ লাখ ডলারের তহবিল-সহায়তা দেওয়ার কথাও প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বিলটি পাস হয়ে আইনে রূপান্তরিত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে এ নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করবে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। এ জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করে মার্কিন শ্রমমন্ত্রী সমন্বয়ের কাজটি করার জন্য ঢাকায় একজন জ্যেষ্ঠ অ্যাটাশে বা দূত পাঠাবেন।
শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষার বিষয় নিয়ে আইএলও এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। প্রস্তাবিত মার্কিন সিনেটের বিলটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি আইএলও এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে চলতে থাকা আলোচনা ও প্রস্তাবের ধারাবাহিকতা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে শ্রমিকস্বার্থ সুরক্ষায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ও তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মতভাবে বাইরের কাছে তুলে ধরাটা জরুরি।