
সুরমা নদীর ওপর স্থাপিত কিনব্রিজ, নদীর পাড়ে আলী আমজাদের ঘড়ি, জেলাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চা-বাগান, পাহাড়-টিলা আর ঝরনা সিলেটের ঐতিহ্য ও সম্পদ। এগুলোর ছোট-বড় দৃষ্টিনন্দন রেপ্লিকা নিয়ে মিনি পার্ক তৈরি করছে জেলা প্রশাসন। ‘গৌরব সিলেট’ নামের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ পার্ক তৈরি হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের ডান পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক একর উন্মুক্ত জায়গা ছিল। সেই স্থানটি পরিষ্কার করে মিনি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ১৩টি উপজেলা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা দিতেই পার্কটি তৈরির মূল উদ্দেশ্য। এরই মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে পার্কটি উন্মুক্ত করা হবে। কোনো ধরনের ফি ছাড়াই দর্শনার্থীরা পার্কটি ঘুরে দেখতে পারবেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, চিত্রশিল্পী ইসমাইল গনির নির্দেশনায় মিনি পার্ক নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। পার্কে ১৯৪০ সালে জেলা প্রশাসনের ব্যবহৃত প্রথম গাড়িটি একটি টিনের শেড তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এটি জেলায় ব্যবহৃত প্রথম গাড়ি। এর ঐতিহাসিক দামও অনেক। এখানে সিলেটের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার রেপ্লিকা রয়েছে। দর্শনার্থীরা এখানে এক টুকরো সিলেটকেই খুঁজে পাবেন। মিনি পার্কে তৈরি করা কিনব্রিজের রেপ্লিকাটি দৈর্ঘ্যে ২১ ফুট ও উচ্চতায় সাড়ে ৮ ফুট এবং আলী আমজাদের ঘড়িটি দৈর্ঘ্যে সাড়ে ৬ ফুট ও উচ্চতায় সাড়ে ৪ ফুট বলে নির্মাণ-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইসমাইল গনি বলেন, জেলা প্রশাসন সৌন্দর্যবর্ধনের বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে পার্ক নির্মাণের পাশাপাশি ‘প্রকৃতি কন্যা’ ও ‘নাগরিলিপি’ ম্যুরাল এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ফটো গ্যালারি স্থাপন করা হয়েছে। গ্যালারিতে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত সব আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া পুরোনো কালেক্টরেট লাইব্রেরি সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কার্যালয়ের বিভিন্ন দেয়ালে সিরামিক দিয়ে সিলেটের নয়নাভিরাম দৃশ্য, নদ-নদী ও স্থাপনার ম্যুরাল বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের চত্বরে ৯ ফুট উচ্চতা ও ৪ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট মাশরুম আকৃতির দৃষ্টিনন্দন তিনটি বসার ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষটি রাতারগুল, বিছনাকান্দিসহ আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটের বিশাল আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে হয়েছে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি।
জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে যোগদানের পর থেকে জেলা প্রশাসনকে নাগরিকবান্ধব করার উদ্যোগ নিই। এরই অংশ হিসেবে জনগণের সেবাপ্রাপ্তি সহজীকরণের জন্য ফ্রন্ট ডেস্ক স্থাপন, দৃশ্যমান স্থানে সিটিজেন চার্টার ও উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড লাইন স্থাপন করি। এ ছাড়া এখানকার ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য ও স্থাপনা উপস্থাপনের মাধ্যমে পুরো প্রশাসনের সৌন্দর্যবৃদ্ধির পাশাপাশি একটি মিনি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’