Thank you for trying Sticky AMP!!

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর নির্ধারণ

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যাঁদের বয়স ন্যূনতম ১৩ বছর ছিল, তাঁদের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। যদি কারও বয়স ১৩ বছর থেকে দু-তিন মাস কম থাকে, তাহলে তাঁর নাম অবশ্যই ভারতের তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তায় থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভায় বিবেচনা করা হবে। গত ৩১ জুলাই জামুকার সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জামুকার এর আগের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১৯৭১-এ যাঁদের বয়স ১৫ বছরের কম ছিল, এমন কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন আপত্তি তোলে। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীও নাকচ করে দেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর নির্ধারণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৪ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বিষয়। তথাপি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিরূপণের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ নীতিনির্ধারণী বিষয় হওয়ায় আইন অনুযায়ী তা প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ করতে বলেছেন। আমরা জামুকার সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যাঁদের বয়স ১৩ বছর ছিল, তাঁরাই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার আবেদন করতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত ৩১ জুলাইয়ের সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে জামুকার একজন সদস্য বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন বয়স ১৩ বছর নির্ধারণ করা হলেও মুক্তিযুদ্ধে যাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, তাঁদের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। ভারতের তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, সে বিবেচনায় তাঁদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমারেখা থাকা যৌক্তিক নয়। কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
তবে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জামুকার ওই সভায় বলেন, ১৩ বছরের কম বয়সের একজন কিশোর পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে—এমন ঘটনা বিরল। তাই ভারতের তালিকায় নাম থাকলেই কম বয়সের একজন কিশোরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা কতটা যৌক্তিক হবে, তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।

জামুকার সদস্য ও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ওই সভায় বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে ১৩ বছর না হওয়ায় ভারতের তালিকায় বা লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকা সত্ত্বেও অনেকেই সনদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মনিরুল নামের এক ব্যক্তি যাঁর জন্ম তারিখ ১৯৬০ সালের ১ জানুয়ারি, সে হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তাঁর বয়স হয় ১১ বছর ২ মাস ২৬ দিন। তাঁর নাম লাল মুক্তিবার্তায় আছে, অথচ জামুকা নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের বিবেচনায় তিনি মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রাপ্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
এর আগে জামুকার এক সভায় সিদ্ধান্ত ছিল, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যেকোনো আবেদনকারীর বয়স ১৯৭১ সালে ন্যূনতম ১৫ বছর হওয়া বাধ্যতামূলক। এই সিদ্ধান্তের পর ১৩ বছর বয়সী শহীদুল ইসলাম লালু, ১৪ বছর বয়সী তারামন বিবি ও আবু সালেকদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির কী হবে—এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁদের বয়স ১৫ বছরের বেশি হলেও এসএসসির সার্টিফিকেটে তাঁদের বয়স কম দেখানো হয়েছে। এসব কারণে ওই সভার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হয়নি। এ ছাড়া কাদেরীয়া বাহিনীর সদস্য লালু মিয়া ১৩ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র জমা দেন এবং বীর প্রতীক খেতাবও পান। মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত শর্ত কার্যকর হলে লালু মিয়া ও ১৯৮২-৮৫ সাল পর্যন্ত যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিসিএস কোটায় চাকরি পেয়েছেন, তাঁরাসহ অসংখ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যাঁদের নাম লাল মুক্তিবার্তায় রয়েছে, যাঁরা আগে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছেন— তাঁরা বাদ পড়বেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর নির্ধারণ প্রসঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এটা একটি আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। ৮-১০ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছেন, এমন অনেকে রয়েছেন।