
টানা তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে হেরে গেলেন গৃহবধূ মিতু আক্তার (২৫)। গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্তলাল সেন বলেন, বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) মিতু মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ ছিল, শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচার সইতে না পেরে গত শুক্রবার দুপুরে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন মিতু।
পারিবারিক সূত্র জানায়, মিতুর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মাছুয়াখালী গ্রামে। আট বছর আগে পার্শ্ববর্তী বাউফল উপজেলার ধান্দি গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্বামী মিজানুর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। মো. ইব্রাহিম (৪) ও আট মাসের মারিয়া আক্তার নামে তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে।
মিতুর ভাই মাসুদ রানা বলেন, বিয়ের পর থেকে শ্বশুর আলতাফ হোসেন হাওলাদার ও শাশুড়ি হালিমা বেগম প্রায়ই বিভিন্ন জিনিস চেয়ে মিতুর ওপর মানসিক নির্যাতন চালাতেন। মাসুদ বলেন, মিতু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা মিনারা বেগমকে বলেছেন, তাঁর গায়ের রং কালো বলে শ্বশুর-শাশুড়ি সব সময় তাঁকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। খেতে গেলেও গালাগাল করতেন। শাশুড়ি সব সময় বলতেন, তাঁকে কোনোদিন মেয়ের মতো দেখতে পারবেন না। শেষমেশ গত শুক্রবার ছেলে ইব্রাহিমকে শাসন করায় তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন শ্বশুর-শাশুড়ি। দীর্ঘদিনের অপমান-অত্যাচার সইতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন দেন মিতু।
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, ‘আগুন দেওয়ার পর তাঁর শাশুড়িসহ এলাকার কয়েকজন মিতুকে স্থানীয় হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। কিন্তু আমাদের কাউকে কিছুই জানানো হয়নি। ঢাকা মেডিকেলে আনার পর তাঁর শাশুড়ি পালিয়ে যান। তিনি কোথায় তা এখন পর্যন্ত জানি না।’
ময়নাতদন্তের জন্য মিতুর লাশ গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ময়নাতদন্ত হবে বলে জানা গেছে।
পরিবার সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় মিতুর শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে বাউফল থানায় মামলা করা হবে।
মিতুর শ্বশুর গ্রামের বাড়িতেই আছেন বলে জানা গেছে। শাশুড়ির অবস্থান সম্পর্কে গতকালও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় স্বামী মিজানুরের সঙ্গে গতকাল কথা বলা যায়নি। তবে শনিবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে মিতুর ঝগড়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।