
দুপুরে শহুরে গলি খানিকটা নিঝুম। এরই মাঝে একজন হাঁক দিচ্ছেন লাগবে সুই-সুতা। হাঁক শুনে গলিতে হেঁটে যাওয়া মানুষের পাশাপাশি দু-একটি ফ্ল্যাটের বারান্দায় এসে কেউ কেউ উঁকি দিয়ে দেখছেন। বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে দু-একজন গেটের বাইরেও চলে আসছেন। জামার বোতাম ছিঁড়ে গেলে বা কাপড়ের কোনো একটি জায়গায় সেলাই-ফোঁড় করতে গেলে তখন বোঝা যায় এই সুই-সুতার কত কদর।
গতকাল বুধবার মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের একটি গলিতে সুই-সুতা বলে যিনি হাঁক দিচ্ছিলেন তাঁর নাম মো. রতন। বয়স ২৮। মুখে কোনো বিরক্তি নেই। ভ্যানে করে তিনি সুই-সুতা ফেরি করে বেড়ান। তাঁর ভ্যানে এমন কোনো জিনিস নেই যা সেলাই-ফোঁড়ের কাজে লাগে না। সুই লাগানো কষ্টসাধ্য, তাই ছোট একটি যন্ত্র, তাতে সুই ঢুকিয়ে খুব সহজেই সুইয়ে সুতা লাগানো যায়। রতন একজন ক্রেতাকে হাতে-কলমে তা দেখালেন। আছে সেলাইয়ের আগে কাপড়ে দাগ দেওয়ার চক। একবার সেলাই করার পর যদি সেলাইটি খুলতে হয়, তা আরও বিরক্তিকর। এ সেলাই সহজে খোলার জন্যও ছোট একটি যন্ত্র আছে। সোনামুখী সুই, কুশিকাটা, কার্পেট সেলাই করার সুই, কাপড়ে লাগানোর জন্য চেইন, হরেক রঙের সুতার গুটি, নেইল কাটারসহ ভ্যানে প্রায় ১০ হাজার টাকার জিনিস আছে বলে জানালেন রতন। নয় বছর ধরে যাত্রাবাড়ী থেকে সকালে ভ্যান নিয়ে বের হন রতন, ঘরে ফেরেন রাতে। একেক দিন একেক এলাকায় ঢুঁ মারেন। গলির মধ্যে টেইলার্সের সামনে গেলে চোখের নিমেষে অনেক জিনিস বিক্রি হয়। আর চলতি পথে বা ঘরের মধ্যে যাঁরা থাকেন তাঁরাও রতনের ডাকে চলে আসেন।
রতনের বাড়ি মানিকগঞ্জে। ঘরে বউ আছে। এখন পর্যন্ত ছেলেমেয়ে হয়নি। সারা দিন ভ্যান ঠেলে কষ্টটা একটু বেশি হলেও যা বিক্রি হয় তা দিয়ে দিন ভালোই চলে। দিন শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ভ্যান নিয়ে দাঁড়ালে তখন অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী ২০ টাকা দিতে হয়। সুই-সুতা বিক্রি করেন দেখে পুলিশও তেমন একটা ঝামেলা করে না।