Thank you for trying Sticky AMP!!

শত প্রতিকূলতা ওদের দমাতে পারেনি

দারিদ্র্যের কারণে জীবনসংগ্রামের কঠিন পথ বেছে নিতে হয়েছে তাদের। কৃষিকাজ, দিনমজুরি, গৃহকর্মীর কাজ করেও তারা নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধিতাও। এই অদম্য মেধাবীরা এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আজ দ্বিতীয় পর্বে পড়ুন আরও আট শিক্ষার্থীর জীবনের গল্প।
মৌত্তাছিম মিল্লা তুহিন

শত বাধা ডিঙিয়ে প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছে তুহিন

সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত মৌত্তাছিম মিল্লা তুহিন। পুরো শরীরটাই প্রায় অবশ। দুটি হাতই বাঁকা ও শক্তিহীন। ঘাড়ও খানিকটা বাঁকা। দুই পা সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটতে-চলতে পারে না। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ। তাই শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তাকে দমাতে পারেনি। শ্রুতলেখকের সহযোগিতায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে তুহিন।

তুহিন শেরপুর সদর উপজেলার ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মুকসুদপুর গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে সে।

বাবা আলাল উদ্দিন কৃষিজীবী। মা মমতাজ ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের আয়া। বাবা আলাল ও মা মমতাজ প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের ভালো ফলে তাঁরা ভীষণ খুশি। এখন তাকে একটি ভালো কলেজে ভর্তি করাতে চান। কিন্তু কলেজে পড়ানোর মতো সামর্থ্য নেই তাঁদের।

ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা যে বাধা নয়, ভালো ফল করার মাধ্যমে তুহিন সেটি প্রমাণ করেছে। সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে।

আজমিরা আক্তার

পরীক্ষার দুই মাস আগে বই হাতে পায় আজমিরা

বাবা পোশাক কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন। সেই টাকায় সংসার চলত। মেয়ে আজমিরা আক্তার দশম শ্রেণিতে ওঠার পর সেই চাকরিটাও চলে যায়। মা ছাবিনা আক্তার একটা সেলাই মেশিন সংগ্রহ করে বাড়িতে জামাকাপড় বানিয়ে সংসার চালাতে শুরু করেন। কিন্তু তাতে দুবেলা খাবার জোগাড় করাই মুশকিল। তাই আজমিরার ক্লাসের বইপত্র আর সময়মতো কেনা হয়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় আজমিরা নিজেও সেলাইয়ের কাজ শুরু করে। এভাবে টাকা জোগাড় করে যখন বই কিনতে পারল, তখন এসএসসি পরীক্ষা শুরুর মাত্র দুই মাস বাকি। এমন প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

নাটোর শহরের পালপাড়ার বাসিন্দা আজমিরা আক্তার। সে স্থানীয় নববিধান উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

মা-বাবা মেয়ের সাফল্য শুনে চমকে গেলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মা ছাবিনা আক্তার বলেন, ‘টাকার অভাবে বই কিনে দিতে না পারায় আজমিরার লেখাপড়াটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। তবে নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে সে পরীক্ষা দিছে। এখন কলেজে পড়াতে পারব কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

আজমিরা আক্তার জানায়, বান্ধবীদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে প্রথম আট মাস ক্লাস করেছে সে। শিক্ষকেরাও নোট দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। পরীক্ষার আগে মাত্র দুই মাস নিজের বইপত্র নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

সময়মতো বইখাতা পেলে আরও ভালো ফল করতে পারত আজমিরা। তবে সেসব নিয়ে এখন আর ভাবছে না সে। নিজে উপার্জন করে পড়াশোনা চালাতে হলেও সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

নববিধান উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমান গোবিন্দ বলেন, আজমিরা বরাবরই পড়ালেখায় ভালো। প্রতিবছরই সেরাদের মধ্যে তার নামটা থাকত। একটু সহযোগিতা পেলে সে ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে পারবে।

আকাশ চন্দ্র বিশ্বাস

বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখে আকাশ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাইস্কুল থেকে এবার একজনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। আকাশ চন্দ্র বিশ্বাস নামের এই মেধাবী শিক্ষার্থীর বাড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সিরাজ খাঁর পাড়া গ্রামে। আকাশ বড় হয়ে বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু আপাতত তার চিন্তা ভালো কলেজে ভর্তি আর পড়াশোনার খরচ চলবে কীভাবে, তা নিয়ে।

৫ শতক জমির ওপর ছোট্ট চৌচালা টিনের ঘরে পরিবারটির বসবাস। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে আকাশ সবার ছোট। বাবা মহিন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাসের বয়স হয়েছে। তবু রিকশা নিয়ে ছুটতে হয়। এতে যা আয় করেন, তা-ই দিয়ে চলে সংসার।

মহিন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘রিকশা চালাতে শরীরে আর কুলোয় না। যেদিন শরীর একটু ভালো থাকে, সেদিন রিকশা নিয়ে বের হই। স্কুল থেকে এবার একমাত্র আমার ছেলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। কিন্তু কলেজে ভর্তি করলে অনেক খরচ লাগবে। সেই টাকা কোথায় পাব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’

মা মায়া রানী বিশ্বাস বলেন, আকাশকে ভালো পোশাক কিনে দিতে পারেননি তাঁরা। সব সময় ঠিকমতো খাবারও জোটেনি। তবু সে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিবেশী অনেকে মিষ্টি খেতে চেয়েছিল। কিন্তু মিষ্টি খাওয়ানোরও সামর্থ্য হয়নি।

আকাশের স্কুলশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আকাশ খুবই মেধাবী ছাত্র। পরিবারের দৈন্যের কারণে আমরা বিদ্যালয় থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতাম। সবার সহযোগিতা পেলে আকাশ অনেক ভালো কিছু করতে পারবে।’

সারাবান তহুরা

না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে তহুরার

নানা রোগে আক্রান্ত চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম। চিকিৎসার খরচ মেটাতে ভিটেমাটি সব গেছে। তাই লেখাপড়া বন্ধ করেই দিতে হয়েছিল মেয়ে সারাবান তহুরার। তবে ইচ্ছাশক্তি ছিল প্রবল। আবার স্কুলে যেতে শুরু করে সে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

তহুরা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের বাসিন্দা। সে সরকারি গৌরনদী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

বাবা রফিকুল ইসলাম (৫০) বলেন, তিনি একটা সময় সৌদি আরবে ছিলেন। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থে বেশ চলছিল সংসার। কিন্তু ২০১৫ সালে দেশে ফেরার পরই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ওপেন হার্ট সার্জারি করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। এখন চা বিক্রি করে কোনোমতে বেঁচে আছেন।

অর্থাভাবে ২০১৭ সালে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন রফিকুল। পরে মেয়ের ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানেন। তহুরা টিউশনি করে পড়াশোনা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। এভাবে লেখাপড়া করেই জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এতে মনোবল বেড়ে যায়।

দিনে ছাত্র পড়িয়ে, রাতে নিজের পড়াশোনা করেছে তহুরা। ঠিকমতো বইখাতা কিনতে পারেনি। সহপাঠীদের কাছ থেকে বই এনে নোট তৈরি করেছে। মাঝেমধ্যে না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। এসব কষ্ট ভুলে গেছে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার খবরে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. অলি উল্লাহ বলেন, সারাবান তহুরা খুবই মেধাবী। তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করতে পারবে।

হৃদয় সাহা

হৃদয়ের ইচ্ছাশক্তিটাই ছিল বড়

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বড় গোপালদী গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় সাহা। এ বছর স্থানীয় মাহমুদুন নবী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এক ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় হৃদয়।

হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হৃদয়। ২ শতক জমির ওপর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। বাবা সঞ্জিত কুমার সাহা দিনমজুর। এমন পরিবারের সন্তান হয়েও নিজের অদম্য চেষ্টায় জিপিএ-৫ পেয়েছে হৃদয়।

হৃদয় স্বপ্ন দেখে চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে পড়াশোনার ভার বহন করা অসম্ভব। হৃদয় বলে, ‘ঢাকার একটি ভালো মানের কলেজে পড়তে চাই। এরপর চেষ্টা করব একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের।’

হৃদয়ের মা অমিতা রানী সাহা বলেন, ‘অভাবের সংসার। একজনের উপার্জনে কোনোরকমে পেটে ভাত জোটে। ছেলে এত দিন বাড়িতে থেকে খেয়ে, না খেয়ে পড়াশোনা করেছে। এখন তাকে বাড়ির বাইরে যেতে হবে। কীভাবে তার পড়াশোনার খরচ আসবে, জানি না। আমাদের পক্ষে এ খরচ বহন করা সম্ভব নয়।’

মাহমুদুন নবী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুর রহমান বলেন, হৃদয় অত্যন্ত মেধাবী। ওর মধ্যে অদম্য শক্তি আছে। এ শক্তিই ওকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেটির পাশে দাঁড়ালে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

হুমায়ুন কবির

বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেছে হুমায়ুন

নিজের পড়ালেখার খরচ জোগাতে টিউশনি করতে হয়েছে হুমায়ুন কবিরকে। সংসারের টানাপোড়েনের কারণে নিজে কখনো ক্লাসের বাইরে শিক্ষকের কাছে পড়তে পারেনি। বর্গাচাষি বাবার সঙ্গে যেতে হয়েছে কৃষিকাজে। তবু হাল ছাড়েনি। হুমায়ুন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন কলেজে কীভাবে ভর্তি হবে, এ নিয়েই তার যত দুশ্চিন্তা।

হুমায়ুন কবিরের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইছাগাড়ি গ্রামে। এলাকার শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে একজন। তার বাবা আবদুল কাহার বর্গাচাষি। নিজের কোনো জমিজমা নেই। তারা তিন বোন, এক ভাই। এক বোন কলেজে পড়ে।

হুমায়ুন কবির জানায়, এত দিন স্কুলের শিক্ষকেরা সহযোগিতা করেছেন। কৃষক বাবার পক্ষে তার লেখাপড়ার খরচ দেওয়া সম্ভব নয়। তার বোনটিও অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। এ অবস্থায় ভালো ফল করেও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে সে। হুমায়ুনের বাবা আবদুল কাহার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ছেলেমেয়ে পড়তে চায়। আমি তাদের কোনো সহযোগিতা করতে পারি না। কী করব বলেন, ভাতের জোগাড় করতেই তো হিমশিম খাচ্ছি।’

শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হুমায়ুন কবির লেখাপড়ায় খুব ভালো। এত দিন আমরা যতটুকু পেরেছি, সহযোগিতা করেছি। বলতে গেলে সে নিজের চেষ্টাতেই ভালো ফল করেছে। সহযোগিতা পেলে সে ভবিষ্যতেও ভালো ফল করবে।’

গোপাল মাদ্রাজী

সংসার সামলেও সফল গোপাল

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানের শ্রমিক আপল সামী মাদ্রাজীর ছেলে গোপাল মাদ্রাজী। কয়েক বছর আগে তার মা সেতামা মাদ্রাজী মারা যান। এ অবস্থায় ছোট বোনকে নিয়ে সংসারের সব কাজ সামলাতে হয় গোপালকেই। বাবার কাজেও সহায়তা করতে হয়েছে। এরপরই স্কুলে যাওয়ার ফুরসত মিলেছে গোপালের। এভাবে পড়াশোনা করেই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

ইসলামপুর ইউনিয়নের ভান্ডারীগাঁও উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল গোপাল মাদ্রাজী। এবার এ 

অঞ্চলের চা-শ্রমিকদের সন্তানদের মধ্যে একমাত্র সে-ই জিপিএ-৫ পেয়েছে। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই পড়াশোনা চালিয়ে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার। এরপর চা-বাগানের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতিতে অবদান রাখতে চায় সে।

ভান্ডারীগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খুরশেদ আলী বলেন, দরিদ্র চা-শ্রমিক পরিবারের সন্তান গোপাল খুবই মেধাবী। একটু সহযোগিতা পেলে সে ভবিষ্যতে অনেক বড় হতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।

তপন রবিদাস

ঝরে পড়া তপনের তাক লাগানো ফল

অভাবের কারণে লেখাপড়াটা বন্ধই হয়ে গিয়েছিল তপন রবিদাসের। কিন্তু সব সময়ই সে মনে পুষে রেখেছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বড় হওয়ার স্বপ্ন। শেষমেশ এলাকার একজনের সহযোগিতায় আবার লেখাপড়া শুরু করে তপন। এবারের এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের বাচ্চু রবিদাসের ছেলে তপন। বাচ্চু রবিদাস পেশায় গ্রাম পুলিশের সদস্য

(চৌকিদার)। ছয় সদস্যের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তাই তপন নবম শ্রেণিতে উঠতেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দা সেনাসদস্য শাহিন মিয়া। তিনি তপনের বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তার পড়াশোনায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর তপন নন্নী উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বই, খাতা, কলমসহ সার্বিক সহায়তা পেয়ে পুরোদমে পড়ায় মনোনিবেশ করে সে। সহযোগিতার প্রতিদান দিয়েছে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে। কিন্তু এখন কলেজে ভর্তি হতে হবে। সেই খরচের টাকা কীভাবে মিলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে তপন ও তার পরিবার।

শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্কুলে পড়ানোর জন্য খুব বেশি খরচ হয়নি। তিনিই বই, খাতা, কলম কিনে দেওয়া ও ফরম পূরণের টাকা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি নিয়মিত ছেলেটির পড়াশোনার খোঁজখবর রেখেছেন। কিন্তু কলেজ পর্যায়ে লেখাপড়া করানোর জন্য খরচ অনেক বেশি। পরিবারটির সেই সামর্থ্য নেই। হৃদয়বান কেউ এগিয়ে এলে সে উচ্চশিক্ষায় অনেক ভালো করবে।


[প্রতিবেদনের তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ; প্রতিনিধি, ফরিদপুর, নাটোর, শেরপুর, গৌরনদী, গোয়ালন্দ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) ও নালিতাবাড়ী]