Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে, ফটকের বাইরে শিথিলতা

স্কুলের সামনে অভিভাবক-শিক্ষার্থীর জটলা। সোমবার দুপুরে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবার সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে ৯ দিন হলো। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানায় কিছুটা শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যালয়গুলোর বাইরে অভিভাবকদের জটলা থাকছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরেই ক্লাসে আসছে। সোমবার রাজধানীর তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সোমবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দেখা যায়, কোথাও কোথাও অভিভাবকেরা সামাজিক দূরত্ব না মেনেই অবস্থান করছেন। কিছুসংখ্যক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীকে দেখা গেল ফুটপাতের দোকান ঘিরে জটলা করছেন। তখন ক্লাস শেষ করে এসে বাইরে মূল ফটকের কাছে দাঁড়িয়েছিল দুই ছাত্রী। তাদের একজন জানাল, তারা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ক্লাসে এক বেঞ্চে একজন বসে। ফটক দিয়ে প্রবেশের সময়ই তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করানো হয়। ভেতরে তেমন সমস্যা নেই বললেই চলে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, অভিভাবকদের করণীয় বিষয়ে তাঁরা বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন। অনেক অভিভাবক স্বাস্থ্যবিধি মানছেন, হয়তো শতভাগ মানছেন না। তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে যে স্বাস্থ্যবিধির লঙ্ঘন হচ্ছে, সেটি আগের দিন রোববার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও উল্লেখ করেছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের বাইরের বিষয়টি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ জন্য বারবার অভিভাবকদের অনুরোধ করা হচ্ছে তাঁরা যেন সচেতন হন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।

স্বাস্থ্যবিধি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে মানলেই হবে না, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া এবং বিদ্যালয়ের ফটকের বাইরেও কঠোরভাবে মানতে হবে।
ডা. মুশতাক হোসেন, পরামর্শক, আইইডিসিআর

করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় প্রায় দেড় বছর বন্ধের পর ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন শুধু এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাস হয়ে এলেও গতকাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ক্লাস আরও এক দিন করে বাড়িয়ে সপ্তাহে দুই দিন করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসও এক দিন করে বাড়িয়ে দুই দিন করার চিন্তা চলছে। মাধ্যমিকে যেদিন যে শ্রেণির ক্লাস থাকছে, সেদিন ওই শ্রেণির সর্বোচ্চ দুটি ক্লাস হচ্ছে। আর প্রাথমিকে দিনে তিনটি করে ক্লাস হচ্ছে।

সোমবার রাজধানীর গবর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে গিয়ে উল্লেখযোগ্য ভিড় দেখা যায়নি। স্কুল ছুটির সময় তিনটি ফটক দিয়ে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসে। বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস পৃথক সময় হওয়ায় ভিড় ছিল না।

সশরীর ক্লাস শুরুর প্রথম দিন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে ময়লা দেখতে পেয়েছিলেন। এ জন্য অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাছিবুর রহমান এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদারকি ও মূল্যায়ন শাখার উপপরিচালক সেলিনা জামানকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

সোমবার সকালে সেই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রথম দিনের মতো বাইরে অভিভাবকদের বড় জটলা দেখা যায়নি। কয়েকজন অভিভাবক ফুটপাতে বসেছিলেন। একজন–দুজন করে শিক্ষার্থী ভেতরে প্রবেশ করছিল। ফটকের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তখন শিক্ষার্থীদের পাশে বসানো বেসিনে হাত ধুয়ে যাওয়ার জন্য বলছিলেন। তবে ওই সময় শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপায় শিথিলতা দেখা যায়। ভেতরে গিয়ে আঙিনা পরিষ্কার লক্ষ করা যায়।
অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে একজন শিক্ষক জানালেন, নবম শ্রেণিতে উপস্থিতি বেশি থাকছে। তবে সে তুলনায় এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম।

গত বৃহস্পতিবারের তথ্য দিয়ে ওই শিক্ষক জানালেন, এসএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ৩৭৭ জনের মতো। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ক্লাসে উপস্থিত ছিল ২৩৭ জন। একই দিন নবম শ্রেণিতে মোট প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ছিল ৩৭০ জন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে মানলেই হবে না, বিদ্যালয়ে আসা–যাওয়া এবং বিদ্যালয়ের ফটকের বাইরেও কঠোরভাবে মানতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট কারও কোনো উগসর্গ দেখা দিলে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
‘অনলাইন শিক্ষাও চলবে’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, করোনা মহামারির ভয়াবহতার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। লেখাপড়ার এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও চলবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমও চলমান থাকবে। সোমবার লালমনিরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষা–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।