চট্টগ্রামের ঈদবাজার

শেষ মুহূর্তেও পাঞ্জাবির দোকানে ভিড়

ছেলেদের ঈদের পোশাক বলতে প্রথমেই আসে পাঞ্জাবির কথা। বয়সটা যেমনই হোক, ঈদের সকালের শুরুতেই চাই নতুন পাঞ্জাবি। চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত বিপণিকেন্দ্রগুলো থেকে হকার্স মার্কেট—সবখানেই পাঞ্জাবির বিক্রি এখন জমজমাট।
নগরের কয়েকটি বিপণিকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, দামি ব্র্যান্ডের চেয়েও পাঞ্জাবি কেনার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরামের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানান, এবার পাঞ্জাবির বাজারের বড় অংশই দখল করে রেখেছে সুতি পাঞ্জাবি। ভারী কাজের তুলনায় হালকা কাজের পাঞ্জাবিগুলোই ক্রেতারা বেশি পছন্দ করছেন। রঙের ক্ষেত্রেও হালকা রংই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অ্যান্ডি কটন, খাদি, তসর সিল্কের পাঞ্জাবিও কিনছেন অনেকে।
গতকাল শনিবার নগরের নিউমার্কেটে দুই বন্ধুকে নিয়ে পাঞ্জাবি কিনতে আসেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই প্রতি ঈদে নতুন পাঞ্জাবি পরছি। আগে মা-বাবার সঙ্গে কিনতে আসতাম। এখন বন্ধুদের সঙ্গে আসি। ঈদের সারা দিনই পাঞ্জাবি পরে থাকার পরিকল্পনা আছে, এ জন্য সুতির পাঞ্জাবি কেনার কথা ভাবছি।’
পাঞ্জাবি বিক্রেতারা জানান, মাঝারি ঝুলের ও স্লিম ফিটিংয়ের পাঞ্জাবিগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। মূলত তরুণেরাই এ ছাঁচের পাঞ্জাবি কিনছেন। এ ছাড়া কটি দেওয়া ও শেরওয়ানি ধাঁচের পাঞ্জাবিও চলছে। মধ্যবয়সী ও প্রৌঢ়রা লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি পছন্দ করছেন।
ফ্যাশন হাউস ‘নক্ষত্র’ শুধু পাঞ্জাবি বিক্রির জন্যই খ্যাত। নক্ষত্রের নিউমার্কেট শোরুমের ব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, গলায়-বুকে খুব হালকা কাজের ক্যাজুয়াল কটন ও প্রিন্টের পাঞ্জাবিগুলো খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।
অভিজাত বিপণিকেন্দ্র ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে কাপড় ও নকশাভেদে বড়দের পাঞ্জাবি ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা, ছোটদের পাঞ্জাবি ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আড়ং, অঞ্জনস, শৈল্পিক, বাংলার মেলা, হ্যান্ডিবাজার, ক্র্যাফটস ক্যাসেল, জেন্টলম্যান, ওয়েস্টউড, হুসেইন, মাসুম, সাদাকালোসহ বিভিন্ন দেশি ফ্যাশন হাউস ও দোকানগুলোতে ভিড় করে পাঞ্জাবি কিনছেন ক্রেতারা।
যাঁরা আরও একটু কম দামে পাঞ্জাবি কিনতে চান, তাঁরা যাচ্ছেন নগরের রেয়াজউদ্দিন বাজার বা হকার্স মার্কেটে। সেখানে ৩৫০ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি মিলছে। হকার্স মার্কেটের বিক্রেতারা জানালেন, চাঁদরাত পর্যন্ত পাঞ্জাবির বাজার জমজমাট থাকবে।
পাঞ্জাবির পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে লুঙ্গি আর টুপির বাজারেও বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। জাকাতের লুঙ্গি তো বিক্রি হচ্ছেই, ঈদে নিজের জন্য লুঙ্গি কিনতে আসা ক্রেতার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। রেয়াজউদ্দিন বাজারে গতকাল লুঙ্গি কিনতে আসা মোশারফ হোসেন বললেন, ‘ঈদে তো অনেক নতুন কাপড়ই পাই বা কিনি। কিন্তু একটা নতুন লুঙ্গি না হলে মনে হয় কেনাকাটা পূর্ণ হলো না। এ কারণেই সাড়ে পাঁচ শ টাকা দিয়ে একটি লুঙ্গি কিনলাম।’
চট্টগ্রামের বাজারে একচেটিয়া কদর পাবনার লুঙ্গির। এ ছাড়া কুষ্টিয়া ও দোহারের জয়পাড়ার লুঙ্গিও বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, এবার লুঙ্গির বাজারের পুরোটাই সুতির দখলে। মানভেদে ২৫০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে লুঙ্গি পাওয়া যাচ্ছে। ফুটপাতে অবশ্য লুঙ্গির দাম আরেকটু কম।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ও খুচরা লুঙ্গি বিক্রির প্রতিষ্ঠান ওয়াদুদ ফেন্সি স্টোরের ব্যবস্থাপক মো. নাসিরুদ্দিন বললেন, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজান মাসে লুঙ্গির বিক্রি বাড়ে। চেক লুঙ্গির পাশাপাশি নকশি ও ঝরনা কাজের লুঙ্গিগুলো বেশ বিক্রি হয়।
ঈদ উপলক্ষে টুপির বাজারেও ক্রেতার উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। দেশে তৈরি টুপি বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া পাকিস্তান, তুরস্ক ও চীন থেকে আমদানি করা টুপিও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। ছোটদের জন্য এমব্রয়ডারি করা বা লেস বসানো টুপি বেশি বিক্রি হলেও বড়রা একরঙা টুপিই বেশি কিনছেন বলে জানালেন বিক্রেতারা।