জাম-জামরুল

সাদা-কালোয় মিলমিশ

জাম ষ ছবি: প্রথম আলো
জাম ষ ছবি: প্রথম আলো

বংশ একই, মিল আছে নামেও। পার্থক্য কেবল বর্ণে। তবে সে পার্থক্য সামান্য নয়, জ্যামিতির ভাষায় বললে ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত। একটি কুচকুচে কালো, অন্যটি ধবধবে সাদা। সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব যাই যাই করেও যায় না দুনিয়া থেকে। যতই বলা হোক ‘কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভেতরে সবার সমান রাঙা’ তবু ওই দ্বন্দ্বটির রেশ থেকেই গেছে মানুষের সমাজে। কিন্তু এই দ্বন্দ্ব আপাতত ঘুচে গেছে ঢাকার ফলের বাজারে। সাদা আর কালোর সেখানে সহাবস্থান। একটি কালোজাম, অন্যটি সাদা জামরুল।

জাম-জামরুল দুটিই আমাদের দেশের গ্রীষ্মের জনপ্রিয় মৌসুমি ফল। দুটিই ‘মির্টেসি’ পরিবারের গাছ। এই পরিবারে পৃথিবীতে তিন হাজার প্রজাতির গাছ আছে বলে শনাক্ত করেছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে অনেকগুলোই ফলদ গাছ। জামের বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cuminii এবং জামরুলেরSyzygium samarangense। পাকা চুলের চেয়ে কাঁচা চুলের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি সাদা জামরুলের চেয়ে কালো জামও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। তবে গুণের বিচারে দুটি ফলই পুষ্টিকর। ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিন, লৌহ, ভিটামিন সিসহ বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ। ঢাকার ফলের বাজার, পাড়া-মহল্লার মোড়ে জাম-জামরুল বিকোচ্ছে এখন যথেষ্ট। দামেও জাম এগিয়ে, কেজি ২০০ টাকা। জামরুলের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

জামগাছের আদি নিবাস দক্ষিণ ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আকারভেদে আমাদের দেশে দুই প্রকারের জাম দেখা যায়। একটু বড় আকারের জামকে বলে রাজা জাম। অন্যটি ছোট জাম। ব্ল্যাকবেরি নামে হালে একটি সেলফোন পাওয়া যায়। আদতে ব্ল্যাকবেরি হলো কালোজামের ইংরেজি নাম। এটি চিরসবুজ গাছ। লম্বায় ২০ ফুট বা তারও বেশি হতে পারে। কাঠ খুব শক্তপোক্ত।

জামরুল

ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ। দিনে দিনে বেগুনি এবং পাকলে কালো। জাম ঔষধি গুণেও অনন্য। এর বীজ ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় কার্যকর। কচিপাতার নির্যাস উদরাময় নিরাময় করে। আমাদের দেশে জামের কোনো স্বীকৃত জাত নেই। কালোজাম ছাড়াও বেশ কয়েক রকমের জামের কথা উল্লেখ করেছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী মৃত্যুঞ্জয় রায় তাঁর বাংলার বিচিত্র ফল বইতে। এগুলো হলো কাকজাম, পানিজাম, খুদিজাম, নলিজাম, বুটিজাম ইত্যাদি। তবে এসব জাম ফল হিসেবে তেমন প্রচলিত নয়।

আন্দামানের নাম শুনলে নিশ্চয় সেই ব্রিটিশ যুগে বিপ্লবীদের নির্বাসন দেওয়ার কথা মনে পড়ে। জামরুলের স্বদেশ হলো এই আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। তবে এখন এটিকে আমাদের দেশি ফল বলেই গণ্য করা হয়। জামগাছের চেয়ে জামরুলগাছ আকারে ছোট। জামের মতো জামরুলও সারা দেশে জন্মে। জামের মতোই রসাল ফল। ইংরেজিতে এর নাম স্টার অ্যাপল। মূলত সাদা হলেও এখন টুকটুকে লাল, গোলাপি, লাল-সাদা মেশানো রঙের জামরুলও পাওয়া যায়। এগুলো হাইব্রিড জাতের, বাজারে থাই জামরুল বলে পরিচিত। দেশি জামরুল একটু পানসে স্বাদের। তবে হাইব্রিডগুলো দেখতে সুন্দর, স্বাদেও বেশ মিষ্টি। এ জাতগুলো এসেছে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এসব দেশ থেকে। আমাদের দেশেও কৃষিবিজ্ঞানীরা জামরুলের হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো হলো বারি জামরুল-১ এবং বাউ জামরুল ১ ও ২। এসব জাত অল্প জায়গায়, বাড়ির ছাদে বড় টবেও লাগানো যায়।

মানবসমাজে সাদা-কালোর ভেদ কোনো দিন ঘুচবে কি না কে জানে। তবে ফলের বাজার থেকে দুটোকেই একত্রে কিনে এনে রসনা তৃপ্ত করা যেতে পারে অনায়াসেই।