ফু ল

সাদা পদ্মের খোঁজে

ফরিদপুরের নগরকান্দার রামনগর ইউনিয়নের কুঞ্জনগর বিল থেকে লেখকের তোলা ছবি
ফরিদপুরের নগরকান্দার রামনগর ইউনিয়নের কুঞ্জনগর বিল থেকে লেখকের তোলা ছবি

বাংলা সাহিত্যে নীল পদ্মের প্রসঙ্গ এসেছে নানাভাবে। সে কারণে অনেকেই মনে করেন, প্রকৃতিতে নীল পদ্মের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু আদতে নীল পদ্ম অলীক বস্তু বই কিছু নয়। আমাদের জলাভূমিতে বড়জোর নীল শাপলা বা শালুক ফুলের দেখা মেলে। আর বিলঝিল বা হাওর-বাঁওড়ে গোলাপি পদ্ম বা স্বর্ণকমলই বেশি চোখে পড়ে। সে তুলনায় সাদা পদ্ম নেই বললেই চলে। প্রসঙ্গত, শতদল পদ্মের কথাও বলা যায়। গাজীপুরের শালনা অরচার্ডে বেশ বড় আকৃতির সাদা ও গোলাপি রঙের শতদল পদ্ম দেখা যায়। তবে একসময় সাদা পদ্ম অতটা দুর্লভ ছিল না। প্রায় সমপরিমাণেই চোখে পড়ত দুই রঙের পদ্ম।
বরিশাল শহরে রাজা রায়বাহাদুর সড়কে বর্তমান বিআইডব্লিউটিএর সামনে একটি পুকুরে অনেক বছর ধরেই সাদা পদ্ম আছে। প্রকৃতিবিষয়ক লেখক সৌরভ মাহমুদ জানিয়েছেন, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায়ও অল্প কিছু সাদা পদ্ম আছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার রশিদাবাদ চা-বাগানের কারখানাসংলগ্ন দুটি লেকে প্রতিবছরই সাদা পদ্ম ফোটে। সেখানকার চা-শ্রমিকেরা বিষহরি ও দুর্গাপূজায় এ ফুল ব্যবহার করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালিদীঘি সীমান্তে যাওয়ার পথেও সাদা পদ্মের বিল দেখা যায়।
পদ্ম (Nelumbo nucifera) ভারত ও ভিয়েতনামের জাতীয় ফুল। এশীয় প্রজাতি, আদি আবাস ভিয়েতনাম থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। গাছ বহুবর্ষজীবী। কাণ্ড লতানো স্বভাবের। পাতা গোল। প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার চওড়া। সরু কাঁটাভরা লম্বা বোঁটার ফুলগুলো সুগন্ধি, পাপড়ি সাদা ও পুংকেশর হলদেটে। প্রস্ফুটন মৌসুম বর্ষা থেকে শরৎ। ফল দেখতে বাটির মতো, রং সবুজ। ফলের ভেতরে বাদামি রঙের বীজ। পানির ওপরে পাতা ও ফুল ভাসমান থাকে। মূল পানির নিচে কাদায় আবদ্ধ। প্রবল জ্বরে পদ্মপাতার ওপর শুয়ে থাকলে জ্বরের প্রকোপ কমে।

পদ্ম হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র ফুল। প্রাচীন সাহিত্য, শিল্প ও স্থাপত্যকলায় পদ্মের নানামুখী ব্যবহার লক্ষ করা যায়। বৌদ্ধদের কাছেও সাদা পদ্ম সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক।