
ইরিন খান গত তিন মাসে খুব দরকার ছাড়া ঘর থেকে বের হননি। ঘরে পরার পোশাকও কিনতে পারেননি। কিন্তু এখন সবই খুলেছে। রোজ পরার সাধারণ পোশাকে টান পড়েছে তাঁর। তা কেনার জন্যই তিনি নিউমার্কেটে ঢুঁ দিয়েছিলেন।
সামনেই ঈদ। তবে ঈদের বাজারে উৎসবের উপযোগী জমকালো পোশাকের চাহিদা এবার নেই বললেই চলে। একটি পারলার চালান ইরিন খান। গতকাল সোমবার নিউমার্কেটে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরে পরার কাপড় তো একবারে অনেক কেনা হয় না। কিন্তু এমনভাবে আটকা পড়ে যাব বুঝিনি। আবার নিজেকে পারলারে সময় দিতে হচ্ছে। এখন বাসায় পরার আর বাইরে নিয়মিত পরার জন্য কিছু পোশাক নিচ্ছি।’
নিউমার্কেটের সালোয়ার-কামিজের দোকান হাবিব ব্রাদার্সের ব্যবসায়ী মো. হাবিব বলেন, ‘প্রতি ঈদে নানা নামের, হরেক রকম নকশার জমকালো পোশাক আসে। এবার কিছু তেমন কিছু নেই। নতুন পোশাক আসেনি। আগের বছরের যা ছিল, তা-ই বেচছি। মানুষ বেশি দামের পোশাকও কিনতেছে না।’ তিনি জানান, দোকানপাট চালু হওয়ার পর ক্রেতারা ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামের পোশাকই কিনছেন। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকার মধ্যে যেসব পোশাক, সেগুলো।
জুই ফেব্রিকস নামের দোকানের বিক্রয়কর্মী রুবেল মিয়া জানান, গত এক মাসে তাঁদের দোকানে সাধারণ গজ কাপড় বিক্রি বেশি হয়েছে। ঈদে সাধারণত যেমন চাকচিক্যময় পোশাক-আশাক বিক্রি হয়, এবার তেমন হচ্ছে না।
নিউমার্কেটের ব্লক-বাটিকের দোকানগুলোতেও দেখা গেল গরমে পরার মতো ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার পোশাক ও সুতি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, বাসায় পরার এবং বাইরে নিয়মিত পরার কাপড়গুলোই মানুষ বেশি কিনছে। হকার্স মার্কেটে টি-শার্ট, ট্রাউজার, টপসসহ নিত্য পরার কাপড় বেশি পাওয়া যায়। সেখানে কেনাকাটা করতে আসা রিয়া জামান বলেন, ‘বাসায় পরার টি-শার্টগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আর এবার যখন গরম পড়তে শুরু করে, তখনই সব বন্ধ হয়ে গেল। তাই গরমের জন্য তেমন কোনো পোশাক কেনা হয়নি। সেগুলো নিতে এলাম।’
হকার্স মার্কেটের এক বিক্রেতা মো. আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার টি-শার্ট, ট্রাউজারের চাহিদা বেশি।’
ফুটপাতের পোশাকের চাহিদাও বেশ। ছেলেদের টি-শার্ট, ট্রাউজার বিক্রি করেন মো. সোহেল। তিনি জানান, ফুটপাতে বসার জন্য সারাক্ষণই তাঁরা উচ্ছেদের ভয়ে থাকেন। তবু বিক্রি তাঁর খারাপ হয়নি।
চাঁদনী চকে সালোয়ার-কামিজের বেশ কিছু দোকান রয়েছে। এখানকার এক বিক্রেতা আবু সালেহ বলেন, ‘আগে যাঁরা ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার পোশাক নিতেন, এবার তাঁরা ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে পোশাক নিচ্ছেন। মানুষের চাহিদাও কমেছে।’
ধানমন্ডির এ আর সেন্টারে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা খুব কম। ডি এম বস্ত্রবিতানের বিক্রয়কর্মী স্বর্ণা আক্তার দোকানের সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। বিক্রির অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিক্রি হইত, সেটা এই ঈদের সময়ে ৩ থেকে ৪ হাজারে নেমেছে।’
এ মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছেন মমতাজ বেগম। পরিবারের সবার জন্য কিছু পোশাক কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদ তো আর ওইভাবে হচ্ছে না। তাই উৎসবের জমকালো পোশাকের চাহিদাও কারও নেই। অল্প দামের মধ্যে নিয়মিত পরার জন্য কিছু পোশাক নিলাম।’ আরেক ক্রেতা আশরাফ হোসেন জানান, ঈদের পর তাঁর অফিস শুরু হবে। অফিস করার জন্য কিছু পোশাক কিনবেন আর কিছু ট্রাউজার নেবেন তিনি।