সিলেটে লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে ঈদের রং

সিলেটে ঈদ সামনে রেখে অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে রং মাখিয়ে রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি চলছে। নগরের কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
সিলেটে ঈদ সামনে রেখে অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে রং মাখিয়ে রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি চলছে। নগরের কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ভাঙাচোরা লক্কড়ঝক্কড় একটি গাড়ি। দুজন রংমিস্ত্রি প্রায় দুই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় গাড়িটিতে রং লাগিয়ে সুন্দর ঝকঝকে করে তুললেন। এরপর তাঁরা গাড়ির ভেতরের আসনগুলো বসানোর কাজ শুরু করেন। গত বুধবার নগরের কদমতলী এলাকার একটি মোটর ওয়ার্কশপে বেলা দেড়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

দুই রংমিস্ত্রি জানালেন, ঈদ সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল অনুপযোগী বাস চালানোর জন্য রং করার এমন তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রং লাগিয়ে লক্কড়ঝক্কড় গাড়িকে নতুন বানিয়ে রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি চালাচ্ছেন মালিকেরা।

দুজন রংমিস্ত্রির এমন কথার সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের কদমতলী ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকার আশপাশের আটটি ওয়ার্কশপ ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ১৬টি লক্কড়ঝক্কড় বাস ওয়ার্কশপগুলোতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কোনোটির গায়ে সদ্য রং লাগানো আবার কোনোটিতে রং করার কাজ চলছে। খোদ ওয়ার্কশপের কর্মচারীরাই বলছেন, তাড়াহুড়ো করে এসব বাস কোনোমতে মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। তাই যানবাহনে ত্রুটি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েই গেছে। অথচ এসব গাড়ি ঈদে বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব গাড়ির এক চালক জানান, প্রতিবছর ঈদের আগে ঘরমুখী যাত্রীদের পরিবহনের জন্য এ ধরনের ভাঙাচোরা গাড়ি রংচং করে রাস্তায় নামানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বহু বছরের পুরোনো অন্তত কয়েক শ গাড়ি কোনো রকমে ঘষামাজা করে মালিকদের প্রত্যক্ষ মদদেই রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়। আর সামান্য লাভের আশায় চালকেরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব গাড়ি চালাচ্ছেন।

সিলেট-কুমিল্লা রুটের চলাচলকারী এক বাসচালকের সহকারী জানান, মূলত দুই ঈদেই বাসমালিক-চালকদের বেশি ব্যবসা হয়। তাই যাত্রী টানার আশায় পুরোনো বাসগুলো রঙিন করে আকর্ষণ বাড়ানো হয়। তবে রাস্তায় সামান্য একটু সমস্যা হলেই এসব গাড়ির ইঞ্জিন বিগড়ে যায়। গত বুধবার বেলা তিনটার দিকে কদমতলী এলাকার একটি ওয়ার্কশপে একজন বাসমালিককে বসা অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি তাঁর নাম বলতে রাজি হননি। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িটি নতুন। তবে কয়েকবার অন্য গাড়ির সঙ্গে ঘষা লেগে রং কিছুটা উঠে গেছে। তাই গাড়িতে রং করাতে এসেছেন।

নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহ্বায়ক আইনজীবী সমরবিজয় সী শেখর বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগ নিয়ে লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলোতে রংচং মাখিয়ে অবাধে বিভিন্ন রুটে চালানো হচ্ছে। অঞ্চলিক সড়ক থেকে মহাসড়ক, সর্বত্রই এসব অনুপযুক্ত গাড়ি কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে নির্বিঘে চলছে। যাত্রীরা নতুন গাড়ি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে সেসব গাড়িতে চড়ছেন। গাড়িগুলো লক্কড়ঝক্কড় হওয়ার কারণে ঈদযাত্রায় অহরহ দুর্ঘটনাও ঘটছে।

সিলেট পরিবহন বাস মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক দাবি করেছেন, ফিটনেসবিহীন কোনো বাসযাত্রী পরিবহন করছে না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। কারণ, ঈদের আগে যেসব গাড়ি রং করা হচ্ছে, সেগুলোর রং মূলত মুছে গিয়েছিল। তাই মানুষের ঈদযাত্রা যেন সুখকর হয়, সে জন্য এসব গাড়িতে রংচং করে আকর্ষণীয় করা হচ্ছে।’

বিআরটিএ সিলেটের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফিটনেসবিহীন বাস সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, বিআরটিএ এসব গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। হয়তো বাসগুলো রংচং করা হচ্ছে, নতুনভাবে ফিটনেস সনদ আদায়ের জন্য। তবে ফিটনেস না থাকলে কোনো বাসকেই ফিটনেস সনদ দেওয়া হয় না। এরপরও এমন অপতৎপরতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।