
তিন থেকে পাঁচ হাত লম্বা লেবুগাছ। এসব গাছে ঝুলে আছে লেবু। তবে সচরাচর যে রকম লেবু বাজারে কিনতে পাওয়া যায়, এগুলো তেমন না। একটু ব্যতিক্রম। দেখতে অনেকটা হাতের আঙুলের মতো। তাই এর নামকরণও করা হয়েছে ‘গ্রিন ফিঙ্গার লেবু’। থাইল্যান্ডের এ লেবু চারার দাম ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে। এমন সব চেনা-অচেনা গাছ নিয়ে সিলেটে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বৃক্ষমেলা।
নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে গতকাল বেলা ১১টায় শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যাপী ‘বিভাগীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা’। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট মহানগরের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া। ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মেলা চলবে। মেলায় ৫০টি স্টল অংশ নিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর এস এম মুনিরুল ইসলাম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক আবুল হাসেম। এ ছাড়া সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী এবং কলাম লেখক আফতাব চৌধুরী বক্তব্য দেন। সিলেট বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ মেলা হচ্ছে।
বেলা দেড়টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, মেলার মাঠে শুধু ফুল বা ফল নয়, বনজ আর ঔষধি গাছেরও ছড়াছড়ি। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মেলায় ফলদ গাছের চারার পাশাপাশি অর্কিডের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া লেবুগাছেরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গোলাপ, বেলি, রঙ্গন ফুলের চারাও ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। তাঁরা আরও জানান, প্রথম দিনেই ক্রেতাদের মোটামুটি সাড়া পাওয়া গেছে।
মেলায় অংশ নেওয়া সিলেটের গোলাপগঞ্জের লিমন নার্সারির স্বত্বাধিকারী আবদুর রব জানান, তাঁর নার্সারিতে কমপক্ষে ১০০ প্রজাতির ফলদ, ঔষধি ও বনজ গাছের চারা রয়েছে। এগুলোর দাম ১০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সিলেট নার্সারি মালিক কল্যাণ সংস্থার সদস্য ও এগ্রোসিল নার্সারির স্বত্বাধিকারী আলমগীর আহমদ জানান, তাঁর স্টলে সদ্য বাংলাদেশে পরিচিতি পাওয়া গ্রিন ফিঙ্গার লেবুর পাশাপাশি সুগন্ধি বেলি ফুলের চারা পাওয়া যায়, এ চারার বিশেষত্বই হচ্ছে ফুলটি বিভিন্ন সময়ে সাদা, কমলা ও হলুদ রং ধারণ করে।
২০১৬ সালে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার সিলেট নার্সারিরও একটি স্টল মেলায় রয়েছে। এর স্বত্বাধিকারী মলয় লাল ধর জানান, গ্রিন ফিঙ্গার লেবুর পাশাপাশি তাঁর নার্সারিতে ১৯ জাতের অর্কিড, শতাধিক প্রজাতির ফলদ চারাসহ অন্তত সাড়ে ৩০০ প্রজাতির নানা ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁদের নার্সারির অধীনে বিভিন্ন বাসাবাড়ির আঙিনা ও ছাদে গাছের চারা রোপণ করে সৌন্দর্যবর্ধনও করা হয়। এতে ২০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে।
মেলার উদ্বোধনী দিনেই এসেছিলেন নগরের ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা ছামির মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ঘুরে ঘুরে দেখেছি। কিছু অর্কিড আর ফলের চারা কিনব বলে স্থির করেছি। ভাবছি ছুটির দিনে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে পুনরায় মেলায় আসব। মেয়েকে এসব চেনা-অচেনা গাছগুলো দেখাব।’