স্মৃতিসৌধের স্থপতি মাইনুল হোসেন আর নেই

পাঁচ বছর পর ২০০৬ সালে নিজের সৃষ্টকর্ম দেখতে যান স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। ফাইল ছবি
পাঁচ বছর পর ২০০৬ সালে নিজের সৃষ্টকর্ম দেখতে যান স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। ফাইল ছবি

জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি মাইনুল হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের (এনআইসিভিডি) চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এনআইসিভিডির পরিচালক আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাইনুল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর ডায়াবেটিস ছিল মারাত্মক অনিয়ন্ত্রিত। রক্তচাপও ছিল খুব কম। হাসপাতালে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো গেল না। আজ বেলা আড়াইটার দিকে তিনি মারা যান।’
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে বাসস জানায়, তাঁর মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। বিদেশ থেকে তাঁর বোন ও মেয়ে ফিরে এলে দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
২৩ বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের এই নকশাকারের অকালমৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা একুশে পদকপ্রাপ্ত এ স্থপতির জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ মে মু​ন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ির দামপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা মুজিবুল হক ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ইতিহাস পড়াতেন।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের এ স্থপতি ১৯৭০ সালে ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ওই বছরেরই এপ্রিলে ইএএইচ কনসালটেন্ট লিমিটেডে জুনিয়র স্থপতি হিসেবে যোগদান করেন। কয়েক মাস পর চাকরি ছেড়ে একই বছরের আগস্টে যোগ দেন ‘বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেড’-এ।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগ মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরপর নকশা আহ্বান করা হয়। তখন ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল ইসলাম স্মৃতিসৌধের নকশা জমা দেন। প্রায় ১৭-১৮ জন প্রতিযোগীর ৫৭টি নকশার মধ্যে তাঁর প্রণীত নকশা গৃহীত হয় এবং তাঁর করা নকশা অনুসারেই ঢাকার অদূরে সাভারে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

২০০৬ সালের মার্চে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্তম্ভটির আকার অমন কেন? কী অর্থ তার—জানতে চাইলে এই স্থপতি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘চারদিকে প্রচণ্ড চাপ। সেই চাপে কিছু একটা উঠে যাচ্ছে।’

‘জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাতটা খাঁজের মানে জানতে চাইলে বলেছিলেন, ‘বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত সাতটা বড় আন্দোলন হয়েছিল। সবচেয়ে নিচের খাঁজটা বায়ান্ন, সবচেয়ে উঁচুটা একাত্তর...।’

কথায় কথায় তিনি আরও বলেছিলেন, স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর কারা যেন বেনামি চিঠি দিয়ে তাঁকে খুন করতে চেয়েছিল। তারপর পত্রিকায় ইচ্ছা করে তার নাম ভুল লেখা হয়েছিল। নকশার সম্মানী বাবদ ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তার আয়কর ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ, মানে ১ লাখ। পরে রাজস্ব বোর্ডের কমিশনার ধরে-টরে ২০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছিলেন।

১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট এরশাদ যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন, সে অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন।

আরও পড়ুন :

অজানা ভয় তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে!