পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারীখিলে
পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারীখিলে

হিমালয়ের হাতছানি

চন্দ্রিমা উদ্যান! সেই ভোর থেকে লোকে হাঁটতে আসে এখানে। কেউ দলবল নিয়ে ব্যায়াম করে। হাঁটা শেষে অনেকে রীতিমতো বাদ্যবাজনাও জুড়ে দেয়। স্কেটিংয়ের জন্যও আদর্শ জায়গা চন্দ্রিমা। কেউ আসে ধ্যান করতে। এক সকালে উদ্যানের এক পাশে বটগাছটায় একদল তরুণ–তরুণীকে বাদুড়ঝোলা হয়ে ঝুলতে দেখা গেল। কৌতূহল নিয়ে কাছে গেলাম। গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল হাসিমাখা পরিচিত একটা মুখ, মহিউদ্দিন। সেই কবে বিদেশবিভুঁইয়ে সাইকেল চালিয়েছিলাম মহিউদ্দিনের সঙ্গে। মাঝে কয়েকবার দেখা হয়েছে। আজ বহুদিন পর হাসিখুশি, টগবগে সেই তরুণকে দেখে ভালো লাগল। বাদুড়ঝোলার বিষয়ে প্রশ্নবোধক ইঙ্গিত করতেই একগাল হেসে বললেন, ক্লাইম্বিং প্র্যাকটিস (পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ) চলছে। আমার কৌতূহল দেখে পাশের পাথুরে বেঞ্চটায় বসলেন মহিউদ্দিন। বললেন, পর্বতারোহণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন তাঁরা। একটা প্রতিষ্ঠানও আছে তাঁদের, নাম রোপ–৪।

এক–দুই কথায় আলাপ জমে উঠল। মহিউদ্দিন বললেন, তাঁদের এখানে ছেলেমেয়েরা আসেন একটা স্বপ্ন নিয়ে। রোমাঞ্চভরা মন আর পর্বতারোহণের স্বপ্ন নিয়ে আসেন ওঁরা। তাঁদের কাজ হচ্ছে, এই তরুণদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে পর্বতারোহণের জন্য প্রস্তুত করে তোলা। এ জন্য ধাপে ধাপে আছে কিছু কর্মযজ্ঞ। শুরুতেই হয় নিবন্ধন। তারপর দুদিনের অডিশন। সেখানে বিচারকেরা থাকেন। তাঁরা নিবন্ধনকারীর আগ্রহ দেখেন। পর্বতারোহণের জন্য তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটা প্রস্তুত সেটা পরখ করেন। এই অডিশন থেকে ২৫ জনকে বাছাই করা হয়। তাঁদের নিয়ে চার দিনের একটা ট্রেনিং বা বুটক্যাম্প হয় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারীখিলে। এই বুটক্যাম্পের খরচটা (৫ হাজার টাকা করে) অবশ্য শিক্ষার্থীদেরই বহন করতে হয়। এই ক্যাম্পে পর্বতারোহণ বিষয়ে মূল প্রশিক্ষণটা দেওয়া হয়।

পর্বতারোহণে অনুশীলন আর প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই

বুটক্যাম্পেও বিচারক প্যানেল আছে, জানালেন মহিউদ্দিন। এখানে বিচারকদের ভোট ৫০ শতাংশ, ছাত্রদের ২৫ আর ফেসবুক থেকে দর্শকদের ভোট নেওয়া হয় বাকি ২৫ শতাংশ। এই ভোটাভুটি থেকে সেরা ৫ জনকে বাছাই করে নিয়ে যাওয়া হয় পরবর্তী ধাপে। মিরসরাইয়ের খৈয়ারছড়ায় ঝরনায় পবর্তারোহণের প্রশিক্ষণ চলে। এটা এক দিনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। এখান থেকে সেরা দুজনকে বাছাই করে নেওয়া হবে নেপালে। সেখানে ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার উঁচুতে হিমালয়ের বেজক্যাম্প অবধি ঘুরে আসবেন। বেজক্যাম্প থেকে নেমে আরেকটু উঁচুতে কালাপাথার পাহাড়েও চড়বেন দুই বিজয়ী। নেপাল সফরে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে বিজয়ীদের নিজেদের কোনো খরচাপাতি লাগবে না। পুরোটাই বহন করবে রোপ–৪। ১৫ দিনের নেপাল সফরে দুজনের জন্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করে খরচ পড়বে।

টাকাটা তাহলে কে দিচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা এবারের অভিযানের নাম দিয়েছি “মিশন হিমালয়া–২০২২”। এর জন্য একজন স্পন্সর পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনি নাম প্রকাশ করতে চান না।’ অবশ্য আরও স্পন্সর লাগবে তাঁদের। সেই সন্ধানে আছেন। এর আগে ২০১৮ ও ২০১৯–এ আরও দুবার দুই দুই মোট চারজনকে নিয়ে অভিযানে গেছে রোপ–৪।

রোপ–৪–এর সঙ্গে নেপালে যাওয়া পর্বতারোহীদের একজন আসাদুজ্জামান আসাদ। ‘মিশন হিমালয়া–২০১৯’ বিজয়ী দুজনের একজন তিনি। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সব খরচ রোপ–৪ বহন করেছে বলে জানালেন। তাঁরা গিয়েছিলেন নভেম্বরের দিকে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা ছিল সেটা, বললেন আসাদ।

হিমালয়ে যেতে প্রস্তুতিটা আগে থেকেই নেওয়া চাই। তাই চলতি জুনের ১৭ ও ১৮ তারিখ অডিশন হবে ঢাকায়। সেখান থেকে বুটক্যাম্প হবে সেপ্টেম্বরে। আর খৈয়ারছড়ায় এক দিনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হবে বুটক্যাম্প শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায়। এসব প্রশিক্ষণে বিজয়ী দুজনকে নিয়ে তাঁরা আগামী অক্টোবর নাগাদ নেপালে যাবেন বলে জানালেন মহিউদ্দিন।

এত কর্মযজ্ঞ কেন? লোকে চাইলেই তো এখন পাহাড়ে যেতে পারে, জানতে চাইলাম মহিউদ্দিনের কাছে। বললেন, হ্যাঁ, পারে। কিন্তু সে যাওয়ায় ঝুঁকি থাকে অনেক। যথাযথ প্রশিক্ষণ না নিয়ে এভারেস্টের মতো জায়গায় গেলে বিপদ হতে পারে। তা ছাড়া পর্বতারোহণের রোমাঞ্চটা এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে অ্যাকটিভ লাইফস্টাইলের একটা অংশ।

অডিশন ক্যাম্পের জন্য নিবন্ধনের লিংক:

মিশন হিমালয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: