১০৭টি স্কুলভবন ঝুঁকিপূর্ণ, আতঙ্কের মধ্যে পাঠদান

পশ্চিম বাঁশবা​িড়য়া শাহ কেরামতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবহারের অনুপযোগী ভবন। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো
পশ্চিম বাঁশবা​িড়য়া শাহ কেরামতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবহারের অনুপযোগী ভবন। সম্প্রতি তোলা ছবি l প্রথম আলো

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব দশমিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে। আজ পর্যন্ত সংস্কারের মুখ না দেখা একতলা ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের মাঠে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে। প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান বললেন, মাঝেমধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। দুর্ঘটনা এড়াতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
একই দিন উপজেলার পশ্চিম বাঁশবাড়ীয়াশাহ কেরামতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলমাঠে তোলা টিনের ঘরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক আলম জানালেন, দুই বছর আগে স্কুলভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়। আজও ভবন না হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে টিনের ঘরটি তোলা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় বলছে, পটুয়াখালীর আট উপজেলায় মোট ১ হাজার ১৬৮টি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১০৭টি বিদ্যালয়ের ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৮২৮। ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় কোথাও টিনের ঘর তুলে, কোথাও খোলা আকাশের নিচে পাঠদান চলছে। কোথাও আবার ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গত শনিবার সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চান্দখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান চলছিল। হঠাৎ ছাদের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করে। এতে সামান্য আহত হয় ডালিয়া, আরাফাত, সুমন ও রাহাত নামে চার শিশু। তড়িঘড়ি করে শিক্ষার্থীদের বের করে আনার পরপরই বিমের ঢালাইয়ের একাংশ ধসে পড়ে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলায় নয়টি স্কুলের মধ্যে তিনটি স্কুলের ভবন নেই; ছয়টির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। গলাচিপায় ২২টি স্কুলের মধ্যে ৩টি পরিত্যক্ত; ২টি স্কুলে ভবন নেই। বাকি ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। দশমিনায় ১৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১টিতে পাঠদান চলে খোলা আকাশের নিচে; অপর ১৪টির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ। সদর উপজেলায় ১৪টি স্কুলের মধ্যে ১টিতে খোলা আকাশের নিচে, ১টিতে টিনের ঘর বানিয়ে পাঠদান হয়; ৪টির ভবন এতটাই জরাজীর্ণ যে সেগুলো যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে; অপর ৮টিও জরাজীর্ণ। বাউফলে ২৫টি স্কুলের মধ্যে ১০টির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ১৫টির ভবনও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মির্জাগঞ্জের ১৫টি স্কুল ভবনই জরাজীর্ণ। রাঙ্গাবালীর ৭টি স্কুলের ভবনই জরাজীর্ণ। সব কটিতে টিনের ঘরে পাঠদান চলছে।

এদিকে তালিকায় নাম না থাকলেও ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ, এমন বিদ্যালয়ও রয়েছে। উত্তর দশমিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তার একটি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেগম সাবিতুন্নাহার বলেন, ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বিমে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে তাঁরা শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

দশমিনা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল বাশারও বিষয়টি স্বীকার করলেন। তিনি বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, আসলে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।