
শহুরে বাসিন্দাদের অনেকে আতাফল গাছে ঝুলতে না দেখলেও ফলের দোকান কিংবা ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে তা দেখেছেন। তবে টক আতা চোখে না পড়ারই কথা। একইভাবে মাছ-মাংসের তরকারিতে স্বাদবর্ধকের কাজ করা বিলিম্বি ফলের নাম কজনই বা জানেন?
তেমনি লেবুজাতীয় ফল আদা জমির পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফলসা অথবা শানতোল কিংবা বিলে-ঝিলে জন্মানো মাখনা ফল চোখে দেখা দূরের বিষয়, নামই হয়তো পরিচিত নয় শহরে বেড়ে ওঠা বেশির ভাগ মানুষের কাছে। এ রকম অপ্রচলিত ও প্রচলিত দেশি ফলের বাহারি সব জাতের সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে আসতে হবে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে।
গতকাল শুক্রবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এমন চেনা-অচেনা ও মূলত দেশি ফলের সমাহার নিয়ে অধিদপ্তরের আ ক মু গিয়াস উদ্দীন মিল্কী মিলনায়তন চত্বরে প্রতিবারের মতো শুরু হয়েছে জাতীয় ফল প্রদর্শনী-২০১৭। সেখানে সরকারি-বেসরকারি ৭৫টি স্টলে আমের ৭০টির মতো প্রজাতিসহ ১৫২ প্রজাতির ফলের একাধিক জাত প্রদর্শিত হচ্ছে। শুধু চোখে দেখা নয়, প্রচলিত-অপ্রচলিত এসব ফলের স্বাদে মন ভোলাতে চাইলে প্রদর্শনী থেকে এর কিছু কিছু কিনে নেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এই প্রদর্শনী ও ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষের উদ্বোধন করেন। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এই প্রদর্শনী চলবে ১৮ জুন রোববার পর্যন্ত। আর ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে বৃক্ষরোপণ পক্ষ।
ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষের এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্য পুষ্টি অর্থ চাই, দেশি ফলের গাছ লাগাই’। মিল্কী মিলনায়তন চত্বরে প্রদর্শনীতে ঢুকতেই চোখে পড়বে বড় ব্যানারে বাংলাদেশের ফলের সচিত্র পরিচিতি, উৎপাদিত ফলের তালিকা ও যে অঞ্চলে যে ফল ভালো হয় তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ। চত্বরের আরও ভেতরে তৈরি করা হয়েছে হরেক জাতের ফলের পিরামিড।
প্রদর্শনীতে স্টলে দায়িত্বরত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বললেন, অধিদপ্তর সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জায়গার মাটি-আবহাওয়ার গুণাগুণ অনুসারে নতুন নানা ধরনের ফলের জাত উদ্ভাবন করে। সাধারণ মানুষকে এসব ফলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই প্রদর্শনী একটা বড় লক্ষ্য।
যেমন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টলে আমই রয়েছে ৬৮ জাতের। বাহারি সব নাম আর আকারের এই আমগুলো দেখার জন্য উৎসাহী দর্শকের কমতি ছিল না। এসব দর্শকের বেশির ভাগের মতে, অতিকায় ব্রুনাই কিং, পালমার, কলা আকৃতির বানানা আম, গৌড়মতী, কোহিতুর, কালাপাহাড়, সুবর্ণরেখা কিংবা সীতাভোগের মতো অপ্রচলিত জাতের আম চোখে দেখা দূরে থাক, তাঁরা নামও শোনেননি পর্যন্ত।
প্রদর্শনীতে জাম, জামরুল, কতবেল, কলা, কাঁঠাল, লিচুর মতো প্রচলিত ও পরিচিত ফলসহ আরও জায়গা করে নিয়েছে বিলাতি আমড়া, নানা জাতের লেবু, তৈকর, করমচা, লটকন, গাব, অড়বরই, আঁশফল, কাউফল, পার্সিমন, টিসাফল, জাবটিকাবা, অ্যাভোকোডা, তুঁতফল, বেতফল, চুকুর, বঁইচি, রাম্বুটান ও ড্রাগন ফলের মতো অপ্রচলিত ফল।
এর আগে সকালে ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘খাদ্য, পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় দেশি ফলের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনার ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম মোফাজ্জল হোসেন। তিনি তাঁর প্রবন্ধে বলেন, দেশে এই মুহূর্তে আবাদি ফলের সংখ্যা ৭০টি। বছরে উৎপাদিত ফলের পরিমাণ প্রায় ৪৭ লাখ মেট্রিক টন, যা চাহিদার তুলনায় ২২ লাখ মেট্রিক টন কম। দিনে একজন মানুষের ১১৫ গ্রাম ফলের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে মাথাপিছু ফলের প্রাপ্যতা ৭৫ গ্রামের কিছু বেশি।
কৃষিসচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।