একটি পরিবারের সদস্য পাঁচজন। এর মধ্যে পরিবারের কর্তাসহ চারজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় অর্ধাহারে দিন কাটে তাঁদের। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থাই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়নি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়নের বড় সুন্দিপ গ্রামের শামসুদ্দিন তস্তার (৭০), তাঁর মেয়ে সুখতারা (২৪), নয়নতারা (২২), জোসনা ভানু (১৮) ও ছেলে ইকবাল হোসেন (২০) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁদের মধ্যে সুখতারা গত ১০ আগস্ট বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
গ্রামবাসী জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর শামসুদ্দিন তস্তার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হন। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় পরিবারটি খাদ্যসংকটে পড়ে। ওই সময় তাঁর চারটি শিশুসন্তান জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। অর্থাভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারেননি। শিশু চারটি এক মাসের ব্যবধানে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। সরকারি ও বেসরকারি কোনো সংস্থা তাঁদের সহায়তা করেনি। তবে সমাজসেবা অধিদপ্তর গত বছরের জুলাই থেকে নয়নতারাকে মাসে ৩০০ টাকা করে ভাতা দিচ্ছে। ইকবাল হোসেন একটি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছেন।
শামসুদ্দিন তস্তার বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর আগে আমার ছয়-সাত দিন জ্বর ছিল। ওই সময় থেকে আমার চোখ দুটি নাই। আমি অন্ধ মানুষ, একা চলতে পারি না। সন্তানেরা সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। স্ত্রী মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করে, তা-ই খেয়ে বেঁচে আছি। এভাবে মানুষ কী করে বাঁচে। আমাদের দুঃখ দেখার মতো কেউ কি পৃথিবীতে নাই?’
শামসুদ্দিন তস্তারের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, ‘সন্তানদের মুখে ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। মা হয়ে এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে। টাকার অভাবে কারও চিকিৎসা করাইতে পারি নাই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনেকবার সাহায্য চেয়েছি। তারা কখনো কোনো সহায়তা করেনি।’ সিভিল সার্জন নিতীশ কান্তি দেবনাথ বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি ভিটামিন-এ এবং পুষ্টির অভাবে শিশুরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। একসঙ্গে একটি পরিবারের চারটি শিশু ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হতে পারে।’