Thank you for trying Sticky AMP!!

'কী হবে আমার ভবিষ্যৎ! কোথায় পাব চাকরি'

তরুণদের ভাবনা, রাজনীতি এখন ক্ষমতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার জায়গা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

হাতে টাকা আসছে, তবে খরচ কি কম? উল্টো তা দিন দিন বাড়ছে। তরুণ ব্যবসায়ী মো. রাসেল হাতে টাকা আসাটাকেই অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো বলতে নারাজ। তরুণদের কারও কারও মতে, রাজনীতি এখন ক্ষমতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার জায়গা। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সক্রিয়তার অভাবে নিরাপত্তা-সংকট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন তরুণেরা।

তরুণদের ওপর দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিচালিত এক জরিপ আজ রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট গত মার্চ মাসে সারা দেশের ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ২০০ তরুণের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে। জরিপটি নিয়েই কয়েকজন তরুণ তাঁদের কথা জানান আজ প্রথম আলোকে।
মো. রাসেল অনলাইন ব্যবসা করেন। জরিপে তরুণদের অর্থনৈতিক সন্তুষ্টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘মাস শেষে আমার হাতেও ভালো টাকাই আসে। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখন ভোগের প্রবণতা বেড়েছে। জীবনযাপনের খরচ অনেক। আয়ের সঙ্গে সবকিছুর দামও বাড়তি। সন্তুষ্ট তো হতে পারছি না।’ রাসেল মনে করেন, প্রবৃদ্ধি বাড়লেও চাকরির ক্ষেত্রে ও টাকা রাখার ক্ষেত্রে তা কাজে আসছে না।
জরিপে দেখা যায়, ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র নিয়ে ভরসা করতে পারছে না ৮২ শতাংশের বেশি তরুণ। এ অবস্থাকে সমর্থন করে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ বলেন, অনেক খরচ করে পড়াশোনা করে তিনি চাকরি পাবেন কি না জানেন না। পেলেও ১২-১৫ হাজার টাকা হবে বেতন। এখনকার সময়ে এই টাকায় খরচ কুলানো যাবে না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় রাতেই ঘুমানোর আগে চিন্তা করি, কী হবে আমার ভবিষ্যতে! কোথায় পাব চাকরি।’
ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সীমা আকবর ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হন। আজকের প্রকাশিত জরিপেও দেখা যায়, তরুণেরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। যাঁদের মধ্যে তরুণীদের সংখ্যা বেশি। সীমা বলেন, ‘মেয়েদের অপমান বা শ্লীলতাহানি করার জন্য রাস্তায় অনেক মানুষই ঘোরে। এদের আতঙ্কে সব সময়ই থাকি। রাতের বেলা কোনো প্রয়োজনে আমার দেশে খুব কম মেয়েই সাহস করে একা বাইরে যেতে।’
প্রচলিত রাজনীতিকে ভালো চোখে দেখেন না সীমা আকবর। তিনি বলেন, রাজনীতি করে কথাটা শুনলেই খারাপ একটা ব্যাপার মনে হয়। যদিও সবাই এক নয়।
অনেক কিছুতে বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও সামাজিক সহনশীলতা কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সত্যানন্দ অধিকারী। স্নাতক শেষ করতে পারেননি। মোহাম্মদপুরে একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কারও ধৈর্য নেই। কেউ কারও কথা ভাবতে চায় না। এ জন্যই সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।’
জরিপের ফলাফল সম্পর্কে তরুণদের অনেকে বলেন, কর্মসংস্থান নিয়ে তাঁরা শঙ্কিত। তাঁদের একই চিন্তা, ভালো চাকরি জুটবে কি না। সদ্য চাকরিতে ঢোকা তরুণদেরও অনেকে মনে করছেন, নতুনদের জন্য বেতনকাঠামো আরও উন্নত হওয়া উচিত।
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র শোয়েব আহমেদ বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী সাফল্য দেখিয়েছে। তবে আস্থা এখনো অর্জন করতে পারেনি। ঘটনা ঘটলে সক্রিয়তা কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। রাজনীতি নিয়ে তাঁর বেশ ক্ষোভ। তিনি বলেন, রাজনীতি এখন ক্ষমতা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার জায়গা। দলীয় ইতিহাস জেনে কেউ আসছে না। বিশৃঙ্খলা চারদিকে। তাই তরুণেরা আগ্রহ হারাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভার্সিটির রাজনীতিতে কিছুদিন ছিলাম। কিন্তু যা হয়, তা রাজনীতি না। সরে আসছি। আসলে তরুণদের সামনে কোনো আদর্শ নেই। তাই তো আমরা রেস্টুরেন্টে যাই, ঘুরি, খাই আর ভবিষ্যতে কী হবে, তা নিয়ে মাঝেমধ্যে হাহাকার করি।’