ঢাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের অনেকেই ‘পান-সুপারি’ দোকানের পান খেয়েছেন। নারী উদ্যোক্তা কণা রেজা ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর অভিজাত বিপণি কেন্দ্রে এই দোকান শুরু করেন। কণা রেজার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাংবাদিক নাজিয়া হোসেন।
‘পান-সুপারি’ দোকানের পানের বিশেষত্ব সম্পর্কে জানান কণা রেজা। তিনি বলেন, তাঁদের দোকানের পানপাতা আসে মহেশখালী থেকে। সবই আয়ুর্বেদিক উপাদান দিয়ে তৈরি। দোকানে বিভিন্ন রকম পান আছে। দাম ৩০ থেকে ২০০ টাকা। জামাই ও বউ পান নামে দুই ধরনের পান আছে। এই পানগুলো বেশ জনপ্রিয়।
পানে কী কী মসলা ব্যবহার করা হয়, জানতে চাইলে কণা রেজা বলেন, তাঁদের দোকানের পানে কিশমিশ, এলাচি, লাল ও সাদা খোরমা, কাঠবাদাম, পেস্তা, মধু, জয়ফল, জয়ত্রী, দারুচিনি, মোরব্বা, চেরি ও জাফরান। এ ছাড়া বিশেষ হারবাল পানি ব্যবহার করা হয়। এই পানি ৮০ রকম প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি।
হঠাৎ পান নিয়ে কেন ভাবনা—জানতে চাইলে কণা রেজা বলেন, পান দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার। নেশার জন্য নয়, হজমের সুবিধার জন্য মানুষ পান খেত। এখন দিন দিন পানের নানা উপকারিতার কথা মানুষ জানতে পারছে। আমার দাদি, নানি পান খেতেন। মা-বাবাও খেতেন। তাঁদের দেখাদেখি আমিও খাই।
রাস্তার পাশে টং দোকানের ধুলোবালি থেকে বের হয়ে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে পান বিক্রি করছেন কণা রেজা। উপস্থাপনটাও করেন একটু শৈল্পিকভাবে।
কোথায় কোথায় পান-সুপারির পান পাওয়া যায়, জানতে চাইলে কণা রেজা বলেন, ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের মমতাজ প্লাজায় প্রথম আউটলেট শুরু হয়। পরে বনানী, বসুন্ধরা সিটি, বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বহির্গমনে পান-সুপারির আউটলেট হয়। পানের মান নিয়ে এত বছরে কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান তিনি।
কেমন উৎসাহ বা প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন—জানতে চাইলে কণা রেজা বলেন, অনেকেই তাঁকে উৎসাহিত করেন। অনেকে বলেন তিনি পানকে শৈল্পিক মাত্রায় নিয়ে গেছেন।
পানের সঙ্গে ব্যবহার করা মসলার মান সম্পর্কেও জানালেন কণা রেজা। বললেন, তাঁরা ঝিনুকের চুনটাই ব্যবহার করেন। বাইরে থেকে আনান। আরব বা ভারত থেকে খুরমা, বাদাম, পেস্তা আনান। কেবলমাত্র পান আর সুপারিটা দেশের ব্যবহার করেন।
প্রতিষ্ঠানের পান কারিগর ও কর্মীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে কণা বলেন, তাঁর বেশির ভাগ কর্মীই ভারতের বেনারস থেকে আনা। সহযোগীরা বাংলাদেশের। নারী কর্মী নিয়ে কাজ করতে বেশি পছন্দ করেন কণা। তিনি দেশের মেয়েদের পান বানানো শেখানোর চেষ্টা করছেন।
কণা বলেন, তাঁর নির্ভরযোগ্য সহযোগী শান্তনু রায় ও শিবলু হোসেন। প্রধান পান মেকার মো. ইব্রাহিম।
প্রতিষ্ঠানে সব মিলে ৫ থেকে ৬ জন কর্মী রয়েছেন।
কোন মৌসুমে পানের ব্যবসা ভালো?
কণা বলেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিয়েবাড়িতে তাঁরা ৫ থেকে ১০ হাজার পানের অর্ডার পান। কখনো বিয়ের অনুষ্ঠানে দোকানও নিয়ে বসেন। কনের মেলাসহ বিভিন্ন মেলায়ও পানের দোকান নিয়ে বসেন। ফেসবুকে অনেকে হোম ডেলিভারি দেন।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানতে চাইলে কণা বলেন, ১৯৮৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর কাছ থেকে তিনি উৎসাহ ও সহযোগিতা পান।