'শূন্য দিয়ে সংখ্যা শুরু হয় না, কিন্তু মোবাইলে কেন...?'

‘ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ২০১৬’-এর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কার বিজয়ীরা। ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সৌরভ দাশ
‘ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ২০১৬’-এর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অতিথিদের সঙ্গে পুরস্কার বিজয়ীরা। ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সৌরভ দাশ

‘শূন্য দিয়ে কোনো সংখ্যা শুরু হয় না, কিন্তু মোবাইলে নম্বর শূন্য দিয়ে শুরু হয় কেন?’, ‘গণিত আর অঙ্কের মধ্যে পার্থক্য কী’, ‘১ থেকে ৯ এর আবিষ্কারক কে?’-খুদে গণিতবিদদের কাছ থেকে এ রকম বুদ্ধিদীপ্ত ও মজার মজার সব প্রশ্ন উঠে এল ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ২০১৬’-এর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে। অতিথিরা ধৈর্য ধরে শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। 

‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে চট্টগ্রাম নগরের সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসব। শিক্ষার্থীদের গণিত, বিজ্ঞান ও দেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পরীক্ষাসহ নানা আয়োজনে দিনব্যাপী জমজমাট ছিল উৎসব প্রাঙ্গণ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে মাদক নিতে বলে, তার থেকে দূরে থাকতে হবে। সে বন্ধু না, শত্রু। শুধু জিপিএ-৫-এর পেছনে ছুটলে হবে না, ছুটতে হবে জ্ঞান অন্বেষণেও।

‘ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো ২০১৬’-এর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে সেরাদের সেরা হয়েছে এই চার খুদে গণিতবিদ। ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’-এই স্লোগানে চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সৌরভ দাশ

আজ সকালে দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার প্রদীপ লুইস রোজারিও। তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. সোহেল ও গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত এবং পরে উৎসব সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত উৎসবের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো বন্ধুসভা, চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসব থেকে এবার মোট ১২৩ জন প্রতিযোগী জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় গণিতবিষয়ক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষেই শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে প্রশ্নোত্তর পর্বে। শিক্ষার্থীদের একের পর এক প্রশ্নের কারণে মঞ্চে থাকা এক শিক্ষক বলে বসলেন, ‘তোমাদের (শিক্ষার্থীদের) প্রশ্নের বহর দেখে মঞ্চে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। আমাদের পা কাঁপছে।’

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে মনে আসা প্রশ্নের উত্তর অতিথিদের কাছে জানতে চায় এই শিক্ষার্থী। ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সৌরভ দাশ


মোহাম্মদ আবরার নামের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে, বাঁশ, বানর, ক্রিকেটার নিয়ে গণিত বইয়ে প্রশ্ন রয়েছে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোনো প্রশ্ন নাই কেন? আরেক শিক্ষার্থী জয় দাশের প্রশ্ন, আয়তনকে ঘন এককে প্রকাশ করা হয়। তাহলে বাংলাদেশের মোট আয়তন বর্গমাইল এককে প্রকাশ করা হয় কেন? ইশরাত জাহানের প্রশ্ন, শূন্যের নিজের কোনো মূল্য নেই কেন? সঞ্চিতা অধিকারী নামের এক শিক্ষার্থী বলে, লিপ ইয়ারে (অধিবর্ষ) ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়তি একটি দিন যোগ হয়। ফেব্রুয়ারির বদলে অন্য মাসে এই বাড়তি দিন যোগ করলে কী সমস্যা ছিল? এক শিক্ষার্থী জানতে চাইল, শূন্য জোড় নাকি বিজোড় সংখ্যা? পৌলমী সাহার প্রশ্ন, শূন্য দিয়ে কোনো সংখ্যা শুরু হয় না, কিন্তু মোবাইলের নম্বর শূন্য দিয়ে শুরু হয় কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে অতিথিরা বলেন, মোবাইলের নম্বর আসলে সংখ্যা নয়, তা প্রতীকমাত্র। হিসাব রাখার সুবিধার জন্য ০,১, ২...ব্যবহার করা হয়। গণিত আর অঙ্কের পার্থক্য নিয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে অতিথিরা বলেন, ‘গণিত হচ্ছে শাস্ত্র। অঙ্ক হচ্ছে সমস্যা, যা আমরা সমাধান করে থাকি। গণিত জানলে অনেক অঙ্ক করা যায়।
এমন বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের জন্য শিক্ষার্থীরা উপহার পায় ‘কিশোর আলো’ ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন বই। আর শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বনবিদ্যা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলো যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক উজ্জ্বল কুমার দেব, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক লিংকন চৌধুরী।
মুনির হাসান মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে না বলার জন্য শিক্ষার্থীদের শপথ করান। সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মাকে ভালোবাসতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশের জন্য বড় কাজ করতে হবে। তবে এ জন্য নিজের ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারণ করতে হবে। লালন করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সবাই একদিন মিলে দেশ ও বিশ্ব জয় করবে। তখন এর প্রধান হাতিয়ার হবে গণিত ও বিজ্ঞান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. সোহেল, মুনির হাসান প্রমুখ।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে প্রশ্ন করছে এই শিক্ষার্থী। ‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সৌরভ দাশ

পুরস্কার পেল ১২৩ শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম পর্বে বিজয়ী হয়েছে ১২৩ শিক্ষার্থী। অতিথিরা তাদের হাতে সনদ ও পদক তুলে দেন। প্রাথমিক শাখায় (তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণি) বিজয়ী হয় ২১ জন। তাদের মধ্যে যৌথভাবে সেরা হয়েছে সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ আবরার ও ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাজিয়া আফরিন। নিম্ন মাধ্যমিক শাখায় (৬ষ্ঠ-৮ম) পুরস্কার পেয়েছে ৪৮ শিক্ষার্থী। এই শাখায় সেরা হয়েছে কলেজিয়েট স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র অতনু রায় চৌধুরী। মাধ্যমিক শাখায় (৯ম-১০ম) জয়ী হয়েছে ৩৬ শিক্ষার্থী। এখানে সেরা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির ছাত্র আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ১৮ শিক্ষার্থী বিজয়ী হয়েছে। এই শাখায় সেরা হয়েছে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান।